ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী পালন

1 month ago 26

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এবং মুহম্মদ আবদুল হাই সমার্থক প্রায়। তিনি বৈরী পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের ঝাণ্ডা তুলে ধরেছেন। তিনি গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের এক স্থায়ী পরম্পরা তৈরি করেছেন। যারা মাতৃভাষা ও নিজস্ব সাহিত্যের উত্থান ও বিকাশে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ সময় সেমিনারে উপস্থিত আলোচকরা এসব কথা বলেন। 

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। ‘অ্যাকাডেমিক সংগঠক মুহম্মদ আবদুল হাই’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. রাফাত আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক ও অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষক এবং সংস্কৃতি-বিশ্লেষক হিসেবে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় রেখেছেন। খুব অল্প বয়সে অ্যাকাডেমিক সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ভাষা ও সাহিত্যকে আশ্রয় করে ষাটের দশকে পূর্ববাংলায় জাতীয়তাবাদ বিকশিত হচ্ছিল বলে সঙ্গত কারণেই মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ভাষা-সাহিত্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিক সাংগঠনিকতা তাকে গুরুত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। 

ড. রাফাত আলম বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই প্রধানত একজন অ্যাকাডেমিক ব্যক্তিত্ব। অ্যাকাডেমিক অবস্থান থেকে তিনি তার প্রধান কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন। ঐতিহাসিক পরম্পরার ভেতর দিয়ে তিনি যেমন পাকিস্তান-ধারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তেমনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংগ্রামী অভিযাত্রায় তার যুক্ততাও ইতিহাসের পরস্পরাবাহিত। বাংলাদেশ-পর্বের বাস্তবতায় আবদুল হাইয়ের ভূমিকা গৃহীত হয়েছে গভীরতর রাজনৈতিক চেতনার অনুষঙ্গে। কিন্তু তিনি কোনো একক মতবাদ-তাড়িত হয়ে তার সক্রিয়তা ও তৎপরতাকে অব্যাহত রাখেননি।

তিনি বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই কার্যকারণের ভিত্তিতে একজন বাস্তববাদী ও দায়বদ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ধারণার মেরুকরণ থেকে মুক্ত হয়ে নিজ পরিসরে অ্যাকাডেমিক কর্মসৃজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যাচর্চার ইতিহাস সমুজ্জ্বল হয়ে আছেন।
আলোচকদ্বয় বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই বাংলা বিভাগের সীমিত ক্ষেত্রে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং পূর্ববাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চাঞ্চল্যের কেন্দ্রভাগেই ছিল তার অবস্থান যার তাৎপর্য স্বাধিকারমুখীন রাজনৈতিক তৎপরতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, মুহম্মদ আবদুল হাই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন, সহিষ্ণু ছিলেন, স্পষ্টবাদী ছিলেন। ‘আজাদ’ পত্রিকার মতো কতিপয় গোষ্ঠী তৎকালীন সময়ে মুহম্মদ আবদুল হাই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎপরতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয় কেননা ভাষা-সাহিত্যের মতো আপাতনিরীহ বিষয়ের নিষ্ঠ চর্চার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের স্বাধিকারের বীজ বোনা হচ্ছিল।

Read Entire Article