ভিক্ষুক পুনর্বাসনের টাকা নিয়ে পালালেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

12 hours ago 6

ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতের ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। নানা অজুহাতে তিনি অফিস স্টাফ ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ধার নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৮ জুলাই থেকে মোজাম্মেল হক পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এরআগে সমাজসেবা কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে থাকা দুস্থদের ঋণ কার্যক্রম ও বিভিন্ন ভাতার ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ বিষয় তদন্তের উদ্যোগ নেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।

দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে। গত ১৪ আগস্ট তিনি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয় ও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির চার লাখ ৭৫ হাজার, মাতৃকেন্দ্রের ঋণ কর্মসূচির পাঁচ লাখ ১৩ হাজার, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের এক লাখ ৪০ হাজার ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ২২ লাখ ৪৭ হাজারসহ মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা একজন কর্মচারীর সই জাল করে উত্তোলন করে নিয়ে যান। এছাড়া অফিস স্টাফদের কাছ থেকে হাওলাদ বাবদ দুই লাখ ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মায়ের অসুখসহ নানা অজুহাতে আরও কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন কর্মকর্তা এমন হবে কখনো ভাবিনি। আমাদের সবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বেশি নিয়েছেন মোজাম্মেল হক।’

অফিস সহকারী নিজামুল আজাদ বলেন, ‘মোজাম্মেল স্যার গত ২৭ জুলাই অফিস করেছেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আর অফিসে আসেননি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’

উপজেলার একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবারের কারও অসুস্থতার কথা বলে টাকা হাওলাদ চাইলে কে না দেবে বলেন। আমিও বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়েছি। পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক কর্মকর্তাই বলছেন, তাদের কাছ থেকে একইভাবে টাকা হাওলাদ নিয়েছেন মোজাম্মেল। এর পরিমাণ কয়েক লাখ হবে। অনেকে আবার মান-সম্মানের ভয়ে বলতে চাইছেন না।’

২০২৪ সালের মে মাসে মোহনগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসবে যোগদান করেন মোজাম্মেল হক। এরপর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ৩৩ লাখ টাকার বেশি অবৈধভাবে অফিসের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করেছেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি টাকা মেরে হজম করার উপায় নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। চাকরি যাবে, গ্রেফতার হবে এবং টাকাও ফেরত দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের ব্যবহৃত মোবাইলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনকালে একইভাবে অর্থ কেলেঙ্কারি করেন মোজাম্মেল হক। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করায় তিরষ্কার দণ্ড দিয়ে তাকে মোহনগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।

এইচ এম কামাল/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article