ভারতের বৈধ পাসপোর্ট এবং বাংলাদেশের ভিসা থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে যেতে পারলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের আফরিনা হাসনাত। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল সীমান্তের এক ভারতীয় কর্মকর্তার হুকুমে ফের বহরমপুরের ফিরতে হলো আফরিনাকে।
মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর সদর শহরের বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও সমাজকর্মী মীর হাসনাতের কন্যা আফরিনা হাসনাত। মেয়েকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মীর হাসনাত।
আফরিনা হাসনাতের অভিযোগ, বাংলাদেশের ঢাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে বাসে রওনা দেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে পেট্রাপোলের চেকপোষ্টে চেকিংয়ের সময় পাসপোর্ট ও বাংলাদেশের ভিসা দেখানোর পর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় সে ভারতীয় ভোটার কিনা? অর্থাৎ এসআইআর অনুযায়ী, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে এমন কোন নথী বা মাধ্যমিক পরিক্ষার এডমিট কার্ড অথবা বাড়ির দলিল চাওয়া হয়।
সেই মুহূর্তেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে দেখানোর মতো এমন কোনো নথি তার কাছে ছিল না। পাসপোর্ট ও ভিসা দেখিয়েও আফরিন হাসনাত ভারতীয় সীমান্ত পার হতে পারেননি । সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তার বাংলাদেশ যাত্রা বাতিল করতে হয়।
আফরিনা হাসনাত বলেন, সীমান্তে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার প্রথমে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পাসপোর্ট নিয়ে প্রথমবার বাংলাদেশ যাচ্ছি কিনা। তখন আমি বলি হ্যাঁ প্রথমবার বাংলাদেশে যাচ্ছি। সেই কথা শোনার পরেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় বাবা-মায়ের নাম, জমি বা বাড়ির দলিল অথবা মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেখতে চান সেই ইমিগ্রেশন অফিসার। আমার কাছে সে সময় এসব কিছুই ছিল না। আমি বলি, আমার কাছে ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। এর থেকে বড় নাগরিকত্বের প্রমাণ আর কি হতে পারে?
আফরিনা আরও বলেন, এসআইআর অনুযায়ী পাসপোর্টও একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমি সব প্রয়োজনীয় নথি জমা করেছি বলেই তো পাসপোর্ট এবং বাংলাদেশের ভিসা পেয়েছি। তাহলে এর কোন মূল্য নেই? এরপর আফরিনা তার মোবাইল খুলে তার বাবার প্যান কার্ড এবং নিজের আধার কার্ড দেখান। কিন্তু কোন কিছুই গ্রাহ্য করেনি ওই অফিসার। তিনি বলেন, আমি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করি। কিন্তু অনড় থাকেন ইমিগ্রেশন অফিসার।
এরপর আফরিনা হাসনাত অভিযোগ করেন, এসব নথি সঙ্গে না থাকায় তাকে বাংলাদেশে যেতে দেওয়া হয়নি। সীমান্ত থেকে বাবাকে ফোন করেন আফরিনা কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। অপরদিকে মেয়ের হেনস্তার কথা শুনে আফরিনার বাবা মীর হাসনাত ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন।
মীর হাসনাত বলেছেন, আমার বয়স ৭৩ বছর। জন্ম থেকে ভারতে আছি। ৫০ বছর ধরে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছি। কোনদিন কেউ আমার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। আজ মেয়েকে নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার সংশোধন অর্থাৎ এসআইআর কিন্তু এভাবে সীমান্ত ইমিগ্রেশনে হেনস্থা করা মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের হস্তক্ষেপ। সরকারের উচিত এ ধরনের এসআইআর-এর নামে চলা অস্পষ্ট প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ করা। বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকলে সেখানে সমস্যা কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন অনেকেই।
ডিডি/টিটিএন

7 hours ago
4









English (US) ·