ভুটানকে ট্রানজিট দিয়ে প্রথম চালানে সরকারের আয় কত?

ট্রানজিট সুবিধায় প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা পণ্য নিয়ে যাচ্ছে ভুটান। সাড়ে ছয় টনের পরীক্ষামূলক চালানটি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে চালানটির শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দুই হাজার ৮৭ টাকা মাশুল আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তবে মোট আয় ৭৭ হাজার টাকার বেশি। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক প্রথম চালানটির শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সম্পন্ন হয়েছে। পণ্যের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মঙ্গলবার খালাস নিয়ে ভুটানের উদ্দেশ্যে নেওয়া হবে। এ তথ্য জানান চালানটি খালাসে নিয়োজিত বাংলাদেশি প্রতিনিধি। সড়কের মাশুল, সড়ক ও সেতুর টোল, মাশুল ও টোল খাতে ভ্যাট ২ হাজার ১৯০ টাকা, কাস্টমসের বিভিন্ন ফি মিলে ১৯ হাজার ১৪৮ টাকা তিনটি চালানে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে কাস্টমসের আয় রয়েছে দুই হাজার ৮৭ টাকা। তাছাড়া ট্রানজিট সড়কের এসকট ফি আদায় করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৪০ টাকা।- চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এইচ এম কবির সূত্র জানায়, ‘অ্যাগ

ভুটানকে ট্রানজিট দিয়ে প্রথম চালানে সরকারের আয় কত?

ট্রানজিট সুবিধায় প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা পণ্য নিয়ে যাচ্ছে ভুটান। সাড়ে ছয় টনের পরীক্ষামূলক চালানটি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে চালানটির শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দুই হাজার ৮৭ টাকা মাশুল আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তবে মোট আয় ৭৭ হাজার টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক প্রথম চালানটির শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সম্পন্ন হয়েছে। পণ্যের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মঙ্গলবার খালাস নিয়ে ভুটানের উদ্দেশ্যে নেওয়া হবে। এ তথ্য জানান চালানটি খালাসে নিয়োজিত বাংলাদেশি প্রতিনিধি।

সড়কের মাশুল, সড়ক ও সেতুর টোল, মাশুল ও টোল খাতে ভ্যাট ২ হাজার ১৯০ টাকা, কাস্টমসের বিভিন্ন ফি মিলে ১৯ হাজার ১৪৮ টাকা তিনটি চালানে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে কাস্টমসের আয় রয়েছে দুই হাজার ৮৭ টাকা। তাছাড়া ট্রানজিট সড়কের এসকট ফি আদায় করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৪০ টাকা।- চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এইচ এম কবির

সূত্র জানায়, ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলটি ২০২৩ সালের ২২ মার্চ সই হয়েছিল। পুরোপুরি স্থলবেষ্টিত কোনো সমুদ্রবন্দর না থাকায় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে ভুটান। ট্রানজিট চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলক চালানটি পরিবহন সন্তোষজনক হলে বাংলাদেশ দিয়ে নিয়মিত পণ্য আমদানি করতে পারে দেশটি।

যে সব পণ্য যাচ্ছে

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সুকুম্ভিত এলাকার প্রতিষ্ঠান এবিট ট্রেডিং কোং লিমিটেড। আমদানিকারক ভুটানের রাজধানী থিম্পুর বাভিসা এলাকার এবিট ট্রেডিং। চালানটিতে ছয় হাজার হাজার ৫শ কেজি পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মিনারেল ওয়াটার, আইস টি, শুকনো পাম ফল, জেলি, চকলেট, শ্যাম্পু ও অরেঞ্জ জুস। চালানটি বন্দর থেকে খালাসের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার এন এম ট্রেডিং করপোরেশন সিঅ্যান্ডএফ লি.।

আরও পড়ুন
লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল: গ্লোবাল অপারেটরে দেশের লাভ না ক্ষতি
কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতার পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো চায় বন্দর
লাভের বন্দরে বর্ধিত মাশুল নিয়ে প্রশ্ন, বোঝা ভোক্তার কাঁধে

গত ৮ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের ল্যাম চ্যাবাং বন্দর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনারটি জাহাজীকরণ হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ভুটানের পণ্য চালানটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এইচআর হেরা’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

ভুটানের ট্রানজিট পণ্যের চালানটি খালাসের জন্য এখনো বন্দরে নথি উপস্থাপন করা হয়নি। যতটুকু জেনেছি সোমবার শুল্কায়ন হয়েছে, মঙ্গলবার চালানটি খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান বন্দরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেবে। তবে এক্ষেত্রে সরকার পেনাল্টি মাফ করে দিয়েছে।- চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক

এদিকে ভুটানের পক্ষ থেকে অবগত হয়ে ট্রানজিটের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ভুটানের আমদানি পণ্যের প্রথম চালানটি কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য গত ১৭ নভেম্বর অফিস আদেশ জারি করে এনবিআর। একইভাবে গত ২০ নভেম্বর ভুটানের ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে সড়কের টোল ও মাশুলের বিষয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

বিভিন্ন খাতে সরকারের আয়

এনবিআরের আদেশে উল্লেখ করা হয়, প্রতি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কনটেইনারে কিলোমিটারপ্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক মাশুল প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কনটেইনারে ২৫৪ টাকা।

এনবিআরে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের গত ২০ নভেম্বরের চিঠি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক ৬৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২ কিলোমিটারের টোল রোড রয়েছে। এটির টোল ৪৫ টাকা। পাশাপাশি মেঘনা, মেঘনা–গোমতী, যমুনা ও তিস্তা সেতুর মোট টোল দিতে হবে চার হাজার ৮১৫ টাকা। আবার পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহনের ট্রেইলারের মোট ওজন ধরে ৬৭২ কিলোমিটার টোল ফ্রি সড়কের মাশুল দিতে হবে ১ হাজার ৪৬২ টাকা।

এসব ফি, টোল, মাশুল আদায় করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) এইচ এম কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভুটানের সঙ্গে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী সাড়ে ছয় টন পণ্যের একটি চালান সোমবার শুল্কায়ন হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর আমরা এনবিআর থেকে চিঠি পাই। ২০ নভেম্বর পাই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিঠি। সে অনুযায়ী গত ২২ নভেম্বর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং এনবিআরের চিঠি অনুযায়ী, সড়কের মাশুল, সড়ক ও সেতুর টোল, মাশুল ও টোল খাতে ভ্যাট ২ হাজার ১৯০ টাকা, কাস্টমসের বিভিন্ন ফি মিলে ১৯ হাজার ১৪৮ টাকা তিনটি চালানে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে কাস্টমসের আয় রয়েছে দুই হাজার ৮৭ টাকা। তাছাড়া ট্রানজিট সড়কের এসকট ফি আদায় করা হয়েছে ৫৮ হাজার ১৪০ টাকা।’ আদায় করা এসব টাকা খাত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি।

চালানটি খালাসের দায়িত্বে থাকা এন এম ট্রেডিং করপোরেশন সিঅ্যান্ডএফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। মঙ্গলবার বন্দর থেকে কনটেইনারটি অন-চ্যাসিস ডেলিভারি নেওয়া হবে। এফসিএল কনটেইনারটি ট্রেইলারের মাধ্যমে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সরাসরি ভুটানে পাঠানো হবে।’

এদিকে ভুটানের ট্রানজিট সুবিধায় আসা কনটেইনারটি দুই মাসের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালাস না নেওয়া চালানে কনটেইনার অনুযায়ী স্টোর রেন্টের জরিমানা আরোপ করা রয়েছে। তবে ট্রানজিট সুবিধার প্রথম চালানটিতে সেই জরিমানা সরকার মওকুফ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভুটানের ট্রানজিট পণ্যের চালানটি খালাসের জন্য এখনো বন্দরে নথি উপস্থাপন করা হয়নি। যতটুকু জেনেছি সোমবার শুল্কায়ন হয়েছে, মঙ্গলবার চালানটি খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান বন্দরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেবেন। তবে এক্ষেত্রে সরকার পেনাল্টি মাফ করে দিয়েছে। এতে বন্দরের নির্ধারিত চার্জ আদায়সাপেক্ষে চালানটি খালাস দেওয়া হবে।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow