ভুল করে বাসের ভাড়া না দিলে কী করবেন? যা বলছেন আহমাদুল্লাহ

2 hours ago 1

স্থলপথে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে সহজলভ্য বাহন হলো বাস। প্রতিদিন হাজারো মানুষ অফিস, স্কুল, বাজার কিংবা দূরপাল্লার ভ্রমণের জন্য বাস ব্যবহার করেন। সময় বাঁচানো, তুলনামূলক কম খরচ আর সহজলভ্যতার কারণে এ পরিবহন ব্যবস্থার ওপর মানুষের নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ভ্রমণের তাড়াহুড়োয় অনেক সময় দেখা যায়, যাত্রী নামতে গিয়ে বাসের ভাড়া দেওয়া ভুলে যান। পরে যখন বিষয়টি মনে পড়ে, তখন অস্বস্তি তৈরি হয়—কীভাবে ওই ভাড়া পরিশোধ করবেন!

কারণ এটি শুধু আর্থিক লেনদেনের বিষয় নয়; বরং অন্যের প্রাপ্য (হক) পরিশোধের সঙ্গে জড়িত। আর ইসলামের দৃষ্টিতে কারও প্রাপ্য বাকি রাখা বা অন্যের হক নষ্ট করা বড় ধরনের গোনাহ। তাই ভুলবশত ভাড়া না দেওয়ার ঘটনাও একজন দায়িত্বশীল ও ইমানদারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় একজন মুসলমানের করণীয় কী—তা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যান।

আলেমদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যথাসম্ভব নির্দিষ্ট বাসটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। যদি চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট বাস পাওয়া না যায়, তবে ওই টাকা বাস কোম্পানি বা মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। একেবারেই সম্ভব না হলে গরিব কিংবা মিসকিন দেখে সদকা করে দিতে হবে।

তবে পরবর্তী সময়ে যদি কোনোভাবে নির্দিষ্ট ওই বাস বা কর্তৃপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যায়, তখন অবশ্যই তাদের বিষয়টি জানাতে হবে। সদকার অনুমতি নিতে হবে এবং প্রয়োজনে ক্ষমা চাইতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি অনুমতি না দেন বা সদকার পরিবর্তে টাকা ফেরত চান, তাহলে তাদের প্রাপ্য অবশ্যই বুঝিয়ে দিতে হবে।

শায়খ আহমাদুল্লাহর ভাষ্য

প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ভুল করে যদি কেউ বাসের ভাড়া না দিয়ে নেমে পড়েন, তবে করণীয় হলো—যদি বাস কোম্পানির নাম জানা থাকে তবে সেই কোম্পানির টিকিট কেটে ছিঁড়ে ফেলে দিন। এতে টাকাটা তাদের নামে ঢুকে যাবে। আর যদি কোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট বাস না হয়, তাহলে চেষ্টা করে বাসটি খুঁজে বের করে তাদের ভাড়া পরিশোধ করবেন। সেটাও সম্ভব না হলে, বাস মালিক ও স্টাফদের পক্ষ থেকে সদকা করে দেবেন। এতে আপনার পক্ষ থেকে তাদের দেনা পরিশোধ হয়ে যাবে।

ইচ্ছা করে এমনটা করলে কী হবে?

রাজধানীর মারকাযুশ শায়েখ আরশাদ আল মাদানি-এর সহকারী মুফতি মাওলানা আব্দুল্লাহ তামিম বলেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করেন (বাস ভাড়া না দিয়ে নেমে যান), তবে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। তিনি জানান, কারো প্রাপ্য গ্রাস করা শুধু হারাম নয়; বরং বড় ধরনের খিয়ানত ও ফিতনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা নিজেদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেও না এবং তা বিচারকদের (ঘুষ হিসেবে) প্রদান কর না। যাতে মানুষের সম্পদের কোনো অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পারো। (সুরা বাকারাহ : ১৮৮)

সিলেটের জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মাওলানা হেলাল আসহাব কাসেমি জানান, নবীজি (সা.) বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। তখন যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে, তাহলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেওয়া হবে।

কারণ, সেখানে লেনদেন অর্থ-সম্পদের বিনিময় করার সুযোগ থাকবে না বলে নেক আমল দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আর আখেরাতে নেক আমলের চেয়ে প্রয়োজনীয় আর কিছুই হবে না। সুতরাং দুনিয়াতে অর্থ-সম্পদে বা সম্মানের হক ফেরত না পেলেও আখেরাতে হক আত্মসাৎকারীর কাছ থেকে নেক আমল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের আমলের পাল্লা ভারী করার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না। (ফাতওয়ায়ে শামী: ৪/২৮৭-২৮৯, আল বাহরুর রায়েক: ৫/১৫২, হেদায়া: ৪/৩৩৯)

Read Entire Article