ভুল চিকিৎসায় ফের রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ভাঙচুর

1 week ago 23

কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২৬ দিনের মাথায় ভুল চিকিৎসায় ফের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বিনয় সেন (৬৫) কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের সতাল এলাকার মৃত নয়ন সেনের ছেলে।

জানা যায়, গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১২টায় হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন বিনয় সেন। ভর্তির পর চিকিৎসায় কিছুটা স্বাভাবিক হন তিনি। পরে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স আয়েশা ছিদ্দিকা বিনয় সেনকে ইঞ্জেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশের ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে বিনয় সেন মারা যান। 

এ ঘটনার পর রোগীর স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এসময় হাসপাতালের ভেতরের গ্লাসের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। বিষয়টি জানার পর পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নিহতের ছেলে হৃদয় সেন বলেন, গত ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাবাকে হৃদরোগের চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসি। রোববার বাবার শারীরিক অবস্থা আবার খারাপ হলে প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য ডা. মজিবুর রহমানের কাছে যায়। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বেশ কয়েকটা পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হন। সন্ধ্যায় কর্তব্যরত নার্স হাসপাতাল থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে শরীরে পুশ করেন। এর ২ থেকে আড়াই মিনিটের মধ্যে বাবা মারা যায়। 

তিনি আরও বলেন, ডাক্তার ও নার্সের কাছে বারবার জানতে চাওয়া হলেও তারা কোনো উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যায়। এমনকি চিকিৎসার যে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়েছিল সেটিও গায়েব হয়ে যায়। তারা কী ইঞ্জেকশন পুশ করেছে তা আমাদের জানা নেই। আমি এই হত্যার বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বেডের রোগীর স্বজনরা বলেন, রোববার রাতে তিনি এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। সকাল থেকে তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলেছেন। একা একা হাঁটাচলা করেছেন। সন্ধ্যার পর নার্স ইঞ্জেকশন পুশ করার পর তিনি আর কথা বলেননি। পরে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন।

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপপরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, বিনয় সেনের মৃত্যুটি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছিল। কর্তব্যরত ডাক্তার হিসেবে ডা. তৌফিক দায়িত্বে ছিলেন। এখানে ভুল ইঞ্জেকশনের মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক মনে হচ্ছে না। তারপরও অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে কর্তব্যরত নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিক দাবি করলেও মৃত্যুর পর হাসপাতালের ফাইলে ভর্তির টিকেট থাকলেও প্রেসক্রিপশন পাওয়া যাচ্ছে না- এমন হওয়ার কারণ কী? জানতে চাওয়া হলে পরিচালক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ‍ওঠার পর বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখতে পাই, হাসপাতালে ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভুল ইনজেকশন পুশ করায় দুই রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া এলাকার ফালু মিয়ার ছেলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২) মারা যান। অপরদিকে খাদ্য নালিতে ছিদ্র থাকায় ব্যথাজনিত কারণে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জহিরুল (২২) মারা যান। সেসময় ভুল ইঞ্জেকশন পুশ করে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা আক্তারকে প্রত্যাহার করা হয়। কিছুদিন পর পর এমন ঘটনার কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা আতঙ্কে রয়েছেন।

Read Entire Article