ভুলই যখন পরিচয়: হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

1 month ago 11

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য উদ্যোক্তা শাড়ি বিক্রি করেন। আপনি যদি একজন শাড়িপ্রেমী হয়ে থাকেন, তাহলে রোজ ‘হ্যান্ডলুমের শাড়িতে ছাড়’ এর পোস্ট নিশ্চয় আপনারও চোখে পড়ে। দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় শাড়িগুলো নিয়ে নিতে ইচ্ছা হয়। আবার সন্দেহও জাগে যে, আসলেই কি এগুলো হ্যান্ডলুমে বা হাতের তাঁতে বানানো?

সত্যি বলতে অনলাইনে এই সন্দেহ দূর করা সম্ভব না। খুব বিশ্বস্ত সেলার হলে পেতে পারেন আসল তাঁতের শাড়ি। তবে কয়েকটি সহজ কৌশল জানলে দোকানে হাতের তাঁতের শাড়ি কেনার সময় আপনাকে আর ধোঁকা দিতে পারবেনা কেউ।

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

হাতের ছোঁয়ায় তৈরি প্রতিটি হ্যান্ডলুম শাড়ি একেকটা জীবন্ত চরিত্র। এতে থাকে তাঁতির নিঃশ্বাস, ঘাম আর সৃজনশীলতার ছাপ। নিখুঁত নয়, বরং ছোট ছোট বৈচিত্র্যই এর গর্ব। আপনি যে শাড়িটা পরছেন, ঠিক একইটা আর দ্বিতীয় কেউ কখনও পাবে না – এই অনন্যতা আর সময়ের ছাপই তাঁতের শাড়ির সৌন্দর্য। অথচ বাজারে অনেকেই এসব শাড়িকে মিলের প্রোডাক্ট ভেবে ভুল করেন। আজ (৭ আগস্ট) হ্যান্ডলুম দিবসে জেনে নিন কীভাবে চিনবেন খাঁটি হাতে বোনা শাড়ি -

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

হাতে বোনা তাঁতের শাড়ির চেনার উপায়

>> খাঁটি হ্যান্ডলুম শাড়িতে আপনি পাবেন মেশিনের নিখুঁত পুনরাবৃত্তির বদলে মানবিক অসমতা। কারণ একজন তাঁতির দুই হাত আর দুই পা দিয়ে বোনার প্রতিটি ধাপ একরকম হওয়া সম্ভব নয়। এতে তাই কোথাও বুনোট একটু ঘন, কোথাও একটু হালকা। এই ছোট ছোট ‘খুঁত’ শাড়ির গায়ে তৈরি হয় সূক্ষ্ম টেক্সচারের খেলা। এগুলো দেখে বুঝতে পারবেন শাড়িটি হাঁতে বুনানো নাকি মেশিনে।

>> শাড়ি শক্ত করতে পোড়েনের সুতো টানার সময়েও তারতম্য থাকে, যা বুনোটে বৈচিত্র্য আনে। এর উল্টো দিকে মেশিনের শাড়ি হয় একদম সমান। যদি ভুলও থাকে, পুরো শাড়ি জুড়ে একই দূরত্ব পর পর তার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাবেন।

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

>> হ্যান্ডলুম শাড়িতে ব্যবহৃত হয় উৎকৃষ্ট সূক্ষ্ম সুতা, যা মেশিনের ধাক্কায় ভেঙে যেতে পারে বলে সেখানে ব্যবহার হয় মোটা সুতা। ফলে হাতে বোনা শাড়ি যেমন টেকসই, তেমনি দামের দিক থেকেও কিছুটা বেশি। কিন্তু যেটুকু দামে আপনি কিনছেন, তার খুব সামান্যই পৌঁছায় তাঁতির হাতে।

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

জামদানি শাড়ি খাঁটি কি না বুঝবেন যেভাবে

হাঁতে বোনা শাড়ির মধ্যে সবথেকে বেশি মানুষ খোঁজ করেন হ্যান্ডলুমের জামদানির। জামদানি শাড়ি হাতে বোনা একটি প্রচণ্ড শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই এর দামও হয় তুলনামূলক বেশি। তিন হাজার থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকার জামদানি কিনতে পাবেন। কারণ একেকটা জামদানি শাড়ি বানাতে দুই কারিগরকে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে সময় দিতে হয় সাত দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত!

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনার হতের জামদানিটা হাতে বোঁনা নাকি মেশিনে? জেনে নিন-

>> হ্যান্ডলুমে জামদানির নকশা হয় মসৃণ, সূক্ষ্ম এবং সামনের ও পেছনের দিক আলাদা করা কঠিন।

>> হাতের তাঁতে এর প্রতিটি সুতা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে বোনা হয়, কোনো সুতো বেরিয়ে থাকে না। কিন্তু মেশিনে বোনা জামদানির উল্টোপিঠে নকশার সুতাগুলো কাটা কাটা অবস্থায় বেরিয়ে থাকে।

>> শাড়ির সুতা যাচাই করাও জরুরি। আসল জামদানিতে ব্যবহৃত হয় সিল্ক বা তুলার সুতা।
মেশিনের জামদানিতে পোড়েনে ব্যবহার করা হয় নাইলন বা পলিয়েস্টার, যেন মেশিনের চাপে সুতা ছিড়ে না যায়।

 হ্যান্ডলুম শাড়ি চিনবেন যেভাবে

>> আঁচলের প্রান্তে থাকা সুতার টুকরোগুলো হাতে নিয়ে মোড়ালে যদি সেগুলো সহজে জড়িয়ে যায়, বুঝবেন সেটা খাঁটি সিল্ক সুতা দিয়ে বুনানো। আর যদি সমানই থাকে, সেটা কৃত্রিম সুতা।

>> এছাড়া সুতার কাউন্টও গুরুত্বপূর্ণ। হাতের তাঁতের জামদানি সাধারণত ৩২-২৫০ কাউন্টের সুতা দিয়ে তৈরি হয়, যেখানে মেশিনে তৈরি শাড়িতে থাকে ২৪-৪০ কাউন্ট। কাউন্ট যত বেশি, সুতা তত সূক্ষ্ম, কাজ তত নিখুঁত।

jagonews24

>> আসল জামদানির কোমরের অংশে কোনো পাড় থাকে না। তবে মেশিনে বোনা শাড়িতে সব অংশেই পাড় থাকে।

>> খাঁটি জামদানি ওজনে হালকা এবং পরতে আরামদায়ক হলেও যত্ন না নিলে টেকসই হয় না। তবে মেশিনে বোনা ভারি শাড়ি বেশিদিন চলে।

jagonews24

সূত্র: বিবিসি, গুরুচণ্ডালী

এএমপি/জিকেএস

Read Entire Article