ভূমিকম্প আতঙ্কে পড়ছে না শিক্ষার্থীরা, পরীক্ষা স্থগিতের দাবি

দেশে টানা দুইদিনে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পগুলোর একটির কেন্দ্র রাজধানীর বাড্ডা। অন্য তিনটি ঢাকার অদূরে নরসিংদীতে। এতে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বারবার এমন ভূকম্পনে আতঙ্কিত মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ঘুম-খাওয়াতেও অনিচ্ছায় ভুগছে অনেকে। অভিভাবকরা বলছেন, ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টিভিতে দেখছে শিশুরা। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সবসময় কম্পনের অনুভব হওয়ার কথা বলছে তারা। আশপাশে কেউ না থাকলে ভয়ে দৌড় দিচ্ছে। এতে তাদের পড়ালেখা, খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং আতঙ্ক কাটাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এদিকে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কোথাও গত ২০ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কোথাও আগামীকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। তবে দুইদিনে চার দফা ভূমিকম্পের পর পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। রাজধানীর ভি

ভূমিকম্প আতঙ্কে পড়ছে না শিক্ষার্থীরা, পরীক্ষা স্থগিতের দাবি

দেশে টানা দুইদিনে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পগুলোর একটির কেন্দ্র রাজধানীর বাড্ডা। অন্য তিনটি ঢাকার অদূরে নরসিংদীতে। এতে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বারবার এমন ভূকম্পনে আতঙ্কিত মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ঘুম-খাওয়াতেও অনিচ্ছায় ভুগছে অনেকে।

অভিভাবকরা বলছেন, ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টিভিতে দেখছে শিশুরা। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সবসময় কম্পনের অনুভব হওয়ার কথা বলছে তারা। আশপাশে কেউ না থাকলে ভয়ে দৌড় দিচ্ছে। এতে তাদের পড়ালেখা, খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং আতঙ্ক কাটাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কোথাও গত ২০ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কোথাও আগামীকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। তবে দুইদিনে চার দফা ভূমিকম্পের পর পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে রোববার প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা রয়েছে। এ স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর মা ফারজানা আফিফা নাদিয়া বলেন, ‘গতকাল থেকে ভূমিকম্প আতঙ্কে বাচ্চারা অস্থিরতার কারণে পড়ালেখায় মন বসাতে পারছে না। একটু আগে আবার ভূমিকম্প হলো। মেয়েটা পড়তে বসেছিল। ভয়ে উঠে দৌড়ে আমার কাছে রান্নাঘরে চলে আসছে। আর পড়াতে বসাতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘সে নিজেও আগামীকাল স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। আমারও বাচ্চাকে স্কুল পাঠাতে ভয় হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিত করা।’

রাখি আকন্দ নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার বাচ্চা সারারাত ঘুমাতে পারেনি। সবসময় আতঙ্কে আছে। স্কুলে যেতে চাইছে না। বলছে ঢাকাতেই থাকবো না। চলো আম্মু আমরা গ্রামে চলে যায়।’

সোনিয়া আফিরন সোয়া, সোনিয়া চৌধুরী, মনিজা রোজি, বুশরা বানু, কামরুন্নেসা মৌসুমীসহ প্রায় শতাধিক অভিভাবক ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল: অল ব্রাঞ্চ’ নামে একটি গ্রুপে নিজেদের সন্তানরা আতঙ্কগ্রস্ত বলে জানিয়েছে। তারা কেউ লিখেছেন, তাদের সন্তান খেতে ও পড়তে চাইছে না। কেউ লেখেন, বাবা-মা ছাড়া একা কোথাও যেতে চাইছে না, স্কুলেও যাবে না।

আরও পড়ুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ ছিল
সন্ধ্যায় ঢাকা ও আশপাশে দুইবার ভূমিকম্প

এদিকে শাহনাজ বেগম নামের একজন অভিভাবক ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মূল শাখার প্রধান ভবন পরিত্যক্ত বলে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেন, ‘ভিকারুননিসার মূল ভবন গত ১৫ বছর আগেই পরিত্যক্ত বলে ঘোষণা করেছে বুয়েটের পরিদর্শন টিম। তারা বলেছে, যে কোনো সময় এটা ধসে যেতে পারে। যেভাবে প্রতিদিন ভূমিকম্প হচ্ছে ঢাকায়, এখন বাচ্চাদের ওই ভবনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পাঠাবো কীভাবে?’

অন্যদিকে রাজধানীর আরেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও রোববার চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা রয়েছে। এ স্কুলের কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গেও কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারাও সন্তানদের আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থার কথা জানিয়ে পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানান।

বনশ্রী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মানজুমা আক্তার বলেন, ‘আগামীকাল ছেলেটার ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা। বার্ষিক পরীক্ষা, অথচ ছেলেকে পড়াতে বসাতে পারিনি। সবসময় অস্থিরতা দেখছি ওর মধ্যে। রাতে ও আলাদা ঘুমায়। কিন্তু গতকাল রাতে আমার কাছে ঘুমিয়েছে। সবসময় ভয় ভয় একটা পরিস্থিতি পার করছে। প্রস্তুতি হয়তো আছে; আগে পড়েছে। কিন্তু মানসিক অবস্থাটা ভালো নেই। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার অবস্থা নেই।’

তবে পরীক্ষা স্থগিত বা পেছানো নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা। ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা পেছানো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। ফলে আগামীকালের পরীক্ষা যথাসময়ে হবে।’

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত লায়লা আক্তার বলেন, আগামীকাল আমাদের ছয়টি শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা আছে। তবে রুটিন মেনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো অভিভাবক কিছু জানাননি।

জানা গেছে, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে শনিবার ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় দুইবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এদিন সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে ভূমিকম্প দুটি অনুভূত হয়। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে প্রথমটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭ এবং দ্বিতীয়টি মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। দুটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার বাড্ডা ও নরসিংদী।

এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে ঢাকা ও এর আশপাশে ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। এর উৎপত্তি ছিল ঢাকার ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২৯ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর পলাশে।

আর শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে নরসিংদীতে উৎপত্তি হওয়া দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। সারাদেশে আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। এতে সারাদেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

এএএইচ/এমআইএইচএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow