ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়

ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনি থেমে যাওয়ার পর কয়েকদিন পর্যন্ত অনেকেই হঠাৎ চমকে উঠে বলেন— ‘মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে!’। অথচ বাস্তবে এমন কিছুই হচ্ছে না। এমন অভিজ্ঞতা কি আপনারও হচ্ছে? এমনটা হয় যখন আমাদের শরীর ও মন নিজস্ব ‘ক্রাইসিস অপারেটিং সিস্টেম’-এ আটকে থাকে। এই অদ্ভুত অনুভূতির নামই পোস্ট আর্থকোয়েক ডিজিনেস সিনড্রম - যা ২০১৬ সালের জাপানের কুমামতো ভূমিকম্পের পর বড় আকারে গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্যাপারটাকে যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলা যায়, ভূমিকম্পের পর আমাদের সেন্সরি সিস্টেম এক ধরনের ‘লেট-স্টেজ অ্যালার্ট মোড’ ধরে রাখে, যেখানে আমাদের শরীরের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পুরো দল (মস্তিষ্ক, ভেস্টিবুলার সিস্টেম ও স্নায়ুতন্ত্র) ঘটনা শেষ হওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্থির অবস্থায়ও মনে হয় — কিছু একটা দুলছে, কিছু একটা আবার ঘটতে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর এমন অনুভূতি হয় কেন? ১. ভেস্টিবুলার সিস্টেমের বিভ্রান্তি ভূমিকম্পের সময় কানের ভিতরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হঠাৎ ধাক্কা খেলে সেটি নতুন করে ক্যালিব্রেশনের প্রয়োজন পড়ে। সেই রিব্যালান্সিং চলাকালীন আমাদের শরীর সামান্য নড়াচড়াকেও ভুলভাবে ধরে। মনে হয় মাটি নড়ছে! ২. স্নায়ুত

ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়

ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনি থেমে যাওয়ার পর কয়েকদিন পর্যন্ত অনেকেই হঠাৎ চমকে উঠে বলেন— ‘মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে!’। অথচ বাস্তবে এমন কিছুই হচ্ছে না। এমন অভিজ্ঞতা কি আপনারও হচ্ছে?

এমনটা হয় যখন আমাদের শরীর ও মন নিজস্ব ‘ক্রাইসিস অপারেটিং সিস্টেম’-এ আটকে থাকে। এই অদ্ভুত অনুভূতির নামই পোস্ট আর্থকোয়েক ডিজিনেস সিনড্রম - যা ২০১৬ সালের জাপানের কুমামতো ভূমিকম্পের পর বড় আকারে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ব্যাপারটাকে যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলা যায়, ভূমিকম্পের পর আমাদের সেন্সরি সিস্টেম এক ধরনের ‘লেট-স্টেজ অ্যালার্ট মোড’ ধরে রাখে, যেখানে আমাদের শরীরের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পুরো দল (মস্তিষ্ক, ভেস্টিবুলার সিস্টেম ও স্নায়ুতন্ত্র) ঘটনা শেষ হওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্থির অবস্থায়ও মনে হয় — কিছু একটা দুলছে, কিছু একটা আবার ঘটতে যাচ্ছে।

ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়

ভূমিকম্পের পর এমন অনুভূতি হয় কেন?

১. ভেস্টিবুলার সিস্টেমের বিভ্রান্তি

ভূমিকম্পের সময় কানের ভিতরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হঠাৎ ধাক্কা খেলে সেটি নতুন করে ক্যালিব্রেশনের প্রয়োজন পড়ে। সেই রিব্যালান্সিং চলাকালীন আমাদের শরীর সামান্য নড়াচড়াকেও ভুলভাবে ধরে। মনে হয় মাটি নড়ছে!

২. স্নায়ুতন্ত্রের ‘ওভার-অপারেশনাল মোড’

তীব্র কম্পনের সময় শরীর যে জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয় না। মস্তিষ্ক তখনও নিজেকে প্রস্তুত রাখার প্রক্রিয়া চলমান রাখে — আবার যদি হয়? এই অতিরিক্ত সতর্কতা বাস্তবে না থাকা কম্পনও অনুভব করায়।

ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়

৩. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের উদ্বেগ বা ভয় আগে থেকেই বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়। ঘুমের ব্যাঘাত, সোশ্যাল মিডিয়ায় আফটারশকের ভিডিও বা খবর দেখা—সব মিলিয়ে শরীরের অ্যালার্ম সিস্টেম আরও সক্রিয় থাকে।

জাপানের কুমামতো ভূমিকম্প-পরবর্তী বড় একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ২৪–৪৮ ঘণ্টায় অনেকেরই মাথা হালকা ঘোরা, দুলে ওঠা বা যেন মাটি নড়ছে — এমন অনুভূতি থাকে। বেশিরভাগ সময়ই কয়েক দিনেই সেটি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ভূমিকম্প থেমে গেছে কিন্তু মনে হচ্ছে আবার কাঁপছে? এমন কেন হয়

কখন চিন্তা করবেন?

যদি কয়েক সপ্তাহ পরও এমন অনুভূতি হতে থাকে, মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা দৈনন্দিন কাজে বাধা দেয় বা ঘুম কমে যায় বা ভয় না কাটে – তাহলে একজন চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

ভূমিকম্পের পর শরীর–মন যে বাড়তি সতর্কতা দেখায়, তা দুর্বলতা নয়—এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া। তবে নিজেকে একটু সময় দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলেই আপনার মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসবে।

সূত্র: প্লস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত ‘২০১৬ সালের জাপানের কুমামতো ভূমিকম্পের পরবর্তী পোস্ট-আর্থকোয়েক ডিজিনেস সিনড্রোম’ শীর্ষক গবেষণা

এএমপি/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow