ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরে কেন? কী করবেন

ভূমিকম্পের মতো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু পৃথিবীকেই নাড়িয়ে দেয় না, আমাদের শরীর ও মনকেও ধাক্কা দিয়ে যায়। ফলে ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও অনেকের মাথা ঘোরে, শরীর দুলে ওঠে, কিংবা চারপাশটা অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন মাথা ঘোরে? চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ইকেলেনজিয়া বা আর্থকোয়েক সিকনেস -এটি এক ধরনের সেন্সরি বিভ্রান্তি। ভূমিকম্পের সময় আমাদের চোখ, কান ও শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গগুলো একসঙ্গে অ্যালার্ট মোডে বা অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় চলে যায়। তাই কম্পন থেমে গেলেও মস্তিষ্ক কিছুক্ষণ সেই কম্পনকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখে। ১. দেহের ভারসাম্য-ব্যবস্থার বিভ্রান্তিইউনিভার্সিটি অব টোকিওর ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় আমাদের ভেস্টিবুলার সিস্টেম — যা শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখে — হঠাৎ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। তাই ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও এই সিস্টেম কিছুটা সময় দুলুনির সংকেত পাঠাতে থাকে, ফলে মাথা ঘোরে। ২. স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যাওয়াস্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ল্যাব বলছে, বিপদ বা আতঙ্কের মুহূর্তে করটিসল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন বেশি হলে মাথা ঝিম ঝিম, মাথা ঘোরা, বমিভাব দে

ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরে কেন? কী করবেন

ভূমিকম্পের মতো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু পৃথিবীকেই নাড়িয়ে দেয় না, আমাদের শরীর ও মনকেও ধাক্কা দিয়ে যায়। ফলে ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও অনেকের মাথা ঘোরে, শরীর দুলে ওঠে, কিংবা চারপাশটা অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু কেন এমন হয়?

কেন মাথা ঘোরে?

চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ইকেলেনজিয়া বা আর্থকোয়েক সিকনেস -এটি এক ধরনের সেন্সরি বিভ্রান্তি। ভূমিকম্পের সময় আমাদের চোখ, কান ও শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গগুলো একসঙ্গে অ্যালার্ট মোডে বা অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় চলে যায়। তাই কম্পন থেমে গেলেও মস্তিষ্ক কিছুক্ষণ সেই কম্পনকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখে।

১. দেহের ভারসাম্য-ব্যবস্থার বিভ্রান্তি
ইউনিভার্সিটি অব টোকিওর ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় আমাদের ভেস্টিবুলার সিস্টেম — যা শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখে — হঠাৎ অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। তাই ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরও এই সিস্টেম কিছুটা সময় দুলুনির সংকেত পাঠাতে থাকে, ফলে মাথা ঘোরে।

২. স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যাওয়া
স্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ল্যাব বলছে, বিপদ বা আতঙ্কের মুহূর্তে করটিসল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন বেশি হলে মাথা ঝিম ঝিম, মাথা ঘোরা, বমিভাব দেখা দিতে পারে।

৩. ভূমিকম্প-পরবর্তী ফ্যান্টম মোশন
নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার–এ প্রকাশিত ২০২৩ সালের এক গবেষণা বলছে, মানুষ যখন দীর্ঘ সময় কম্পনের ভেতর থাকে, মস্তিষ্ক কয়েক মিনিট ধরে সেই নড়াচড়াকে বাস্তব বলে ধরে নেয়। তাই কম্পন থেমে যাওয়ার পরও শরীর যেন হালকা দুলতে থাকে।

ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরে কেন? কী করবেন

৪. হাইপার-অওয়ারনেস ও ভয়
ভূমিকম্পের পর বাস্তবে আর কম্পন না থাকলেও, উদ্বেগের কারণে মাথা হালকা লাগা, হাঁটাহাঁটিতে অসুবিধা, মাথায় চাপ—এসব হতে পারে।

অর্থাৎ ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরা আমাদের শরীরের এক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি সবসময় চিন্তার বিষয় নয়। যদি ১০–৩০ মিনিটের মধ্যে মাথা ঘোরা কমে যায়, পানি খেলেই শরীর স্বাভাবিক মনে হয় অথবা ঘুম বা বিশ্রামের পর ঠিক হয়ে যায়, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। এটি সাধারণ ভেস্টিবুলার প্রতিক্রিয়া। তাহলে কখন সতর্ক হবেন?

>> মাথা ঘোরা যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে

>> বারবার বমি হয়

>> শরীর অসাড় লাগে

>> হাঁটতে কষ্ট হয়

এগুলো হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরালে যা করবেন

১. বসে পড়ুন, চোখ বন্ধ রাখুন
দাঁড়িয়ে থাকলে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ে যেতে পারেন। বসে চোখ বন্ধ করলে ভেস্টিবুলার সিস্টেম দ্রুত শান্ত হয়।

২. ধীরে পানি পান করুন
দুশ্চিন্তা ও ডিহাইড্রেশন মাথা ঘোরানো বাড়ায়। তাই দুই–তিন চুমুক পানি খান।

৩. গভীর শ্বাস নিন
স্ট্রেস হরমোন কমাতে ৪ সেকেন্ডে শ্বাস নিন, ৬ সেকেন্ডে ছাড়ুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত করতে খুব কার্যকর।

ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরে কেন? কী করবেন

৪. দ্রুত কিছু খাবার খান
রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলের মাথা ঘোরে। বিস্কুট বা ফল খেলে উপকার পাবেন।

৫. মোবাইল স্ক্রিন কম দেখুন
স্ক্রিনের দ্রুত আলো বা নড়াচড়া মাথা ঘোরা বাড়ায়।

৬. আরেক দফা কম্পন মনে হলে আতঙ্কিত না হয়ে খোলা জায়গায় বের হন
মস্তিষ্ক অনেক সময় ভুল সংকেত দেয়। প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন এটা আসলেই কম্পন কি না। চোখের সামলে একটা গ্লাসে বা বোতলে পানি রাখুন। সন্দেহ হলেই পানির দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন।

ভূমিকম্পের পর মাথা ঘোরা বেশ স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। তবে শরীরের সংকেতগুলোকে হালকাভাবে না নেওয়াই ভালো। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মানসিক শান্তি বজায় রাখা।

সোর্স: ইউনিভার্সিটি অব টোকিও (২০২২), স্ট্যানফোর্ড সাইকোলজি ল্যাব (২০২১), নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার (২০২৩)

এএমপি/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow