ভোট বঞ্চিতদের অধিকার রক্ষায় ইসির ‘হাইব্রিড সলিউশন’
প্রবাসে অবস্থান, আইনের আওতাভুক্ত ব্যক্তি অথবা ভোট আয়োজনে যুক্ত হয়ে ভোটাধিকার বঞ্চিতদের সংখ্যা নগণ্য নয়। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর ভোটাধিকারকে কেন্দ্র করে ভোট বঞ্চিতদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাকের সমন্বয়ে ‘পোস্টাল ব্যালট অ্যাপ’ উদ্বোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের পর ডাকযোগে ভোট প্রদানের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিতের এ উদ্যোগকে হাইব্রিড সমাধান বলছে ইসি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিটি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি হিসেবে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এ অ্যাপ উদ্বোধন করেন। উদ্ধোধনী দিনে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূত ও প্রতিনিধিরা অনলাইনে নিবন্ধন করেন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) পূর্ব এশিয়ার চার দেশের প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর মধ্যদিয়ে ১৪৩টি দেশের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসীর ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার অবসান ঘটবে বলে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে জানান সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, তাদের ভোট দেওয়ার মাধ
প্রবাসে অবস্থান, আইনের আওতাভুক্ত ব্যক্তি অথবা ভোট আয়োজনে যুক্ত হয়ে ভোটাধিকার বঞ্চিতদের সংখ্যা নগণ্য নয়। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর ভোটাধিকারকে কেন্দ্র করে ভোট বঞ্চিতদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাকের সমন্বয়ে ‘পোস্টাল ব্যালট অ্যাপ’ উদ্বোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের পর ডাকযোগে ভোট প্রদানের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিতের এ উদ্যোগকে হাইব্রিড সমাধান বলছে ইসি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিটি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি হিসেবে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এ অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
উদ্ধোধনী দিনে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূত ও প্রতিনিধিরা অনলাইনে নিবন্ধন করেন। বুধবার (১৯ নভেম্বর) পূর্ব এশিয়ার চার দেশের প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর মধ্যদিয়ে ১৪৩টি দেশের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসীর ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার অবসান ঘটবে বলে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে জানান সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, তাদের ভোট দেওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও বিস্তৃত, আরও প্রতিনিধিত্বশীল এবং আরও শক্তিশালী হবে।
নিবন্ধ ও ভোট প্রদান
মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড, নিবন্ধন, ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো, ভোট প্রদান এবং ডাকযোগে ব্যালট ফেরত আসা পর্যন্ত পাঁচটি ধাপে শেষ হবে এ প্রক্রিয়া। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং কয়েদিরা (আইনের আওতাভুক্ত ব্যক্তি) ভোট দিতে পারবেন।
নিবন্ধন ও ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ইসি। পৃথক দুটি নির্দেশনা দিয়ে সংস্থাটি প্রবাসীদের কাছে নতুন এ উদ্যোগকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর লগইন করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই নম্বরে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে নিয়ে সেলফি তোলা এবং আলাদাভাবে এনআইডির ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পাসপোর্ট থাকলে তার ছবিও দিতে হবে। সবশেষে বিদেশে বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আরও পড়ুন
১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসীর ভোট দিতে না পারার বঞ্চনা দূর হলো: সিইসি
পোস্টাল ভোটিং: প্রবাসীদের নিবন্ধনের সময় ৫ দিন, কোন দেশে কবে?
সিস্টেম থেকে তথ্য যাচাই শেষে অ্যাপে ‘আপনি এখন নিবন্ধিত’ বার্তা দেখা যাবে। এরপর অপেক্ষা থাকবে কেবল ব্যালট পেপারের জন্য।
ইসির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন শেষ হলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। তাদের মাধ্যমে পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এরপর নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় তিন খামের ভেতর ব্যালট পাঠানো হবে। একটি খামের ভেতরে থাকবে ব্যালট পেপার, আরেকটিতে আসন নম্বর ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট বক্সে জমা দিলেই ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আরেক ধাপে বলা হয়েছে, খাম পাওয়ার পর ভোটারকে তার অ্যাপে লগইন করে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে, নিজের ছবি তুলতে হবে এবং খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। এতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখা যাবে। এরপর খাম খুলে ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। ব্যালট খামে ভরে তা নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিলেই ভোট সম্পন্ন হবে।
অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে নিবন্ধন ও ভোট প্রদানের বিস্তারিত জানান আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্টের (ওভিসি) প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালীম আহমাদ খান।
পুরো ভোটিং প্রক্রিয়ার ক্রমধারা তুলে ধরে তিনি জানান, পোস্টাল ভোট বিডির প্রচার> নিবন্ধন> ব্যালট পেপার ও তিন ধরনের খাম মুদ্রণ> নির্বাচন কর্মকর্তার উপস্থিতি> পার্সোনালাইজেশন (ডাক বিভাগ)> পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু> ব্যালট ট্র্যাকিং> ভোট প্রদান> প্রবাসে কাছাকাছি ডাকবাক্সে খাম রাখা> পোস্টাল ব্যালট ফেরত ও ট্র্যাকিং> ডাক বিভাগ গ্রহণ> রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছানো> রিটার্নিং অফিসারের গ্রহণ> পোস্টাল ব্যালট ব্যালট বাক্সে রাখা> গণনা এবং শেষ ধাপে ফল ঘোষণা।
নিবন্ধন কোন অঞ্চলে, কবে?
সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই ৩৫ দিনে পাঁচদিন করে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা অঞ্চলে চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর। উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে নিবন্ধন চলবে ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর। ইউরোপে নিবন্ধন চলবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্যে নিবন্ধন চলবে ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে নিবন্ধন চলবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব বাদে) ১৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর। এছাড়া বাংলাদেশেরে সরকারি কর্মকর্তারা, নির্বাচনি দায়িত্বের কর্মকর্তা, আইনের আওতাধীন ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
ওভিসি উদ্যোগ এলো যেভাবে
প্রায় ১৫ বছর ধরে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকের ভোটাধিকার ক্ষুণ্নের ধারাবাহিক ফল হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের ২১ নভেম্বর গঠিত এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিতকে প্রধান এজেন্ডা হিসেবে বারবার উল্লেখ করে আসছিল। অ্যাপ উদ্বোধনের পর এটিকে এটি বাংলাদেশের সর্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের জন্য মাইলফলক বলে অভিহিত করেছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
এ উদ্যোগ বাস্তাবায়নে ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ (ওসিভি) শীর্ষক প্রকল্প নেয় ইসি। গত ১৯ আগস্ট আগস্ট জিও জারির মাধ্যমে ৪৯ কোটি টাকার এক প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার।
দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবনা ইসির
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৫০ লাখ ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে। এ পদ্ধতির চ্যালেঞ্জ নিয়েও ভাবনা রয়েছে সংস্থাটির।
বিশ্বজুড়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রচলিত থাকলেও এর হার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রবাসী ভোটারদের গড় নিবন্ধনের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। গ্লোবাল ওয়েস্টেজে রেট হলো ২৪ শতাংশ। প্রতি চারটিতে একটি ব্যালট নষ্ট হয়।
অনলাইনে নিবন্ধন পদ্ধতির ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তাও একটি চ্যালেঞ্জ হিসিবে আবির্ভূত হবে বলে জানান তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ বছর ট্রায়াল করে দেখা হয়। আমরা ট্রায়াল করেছি এক মাসও হয়নি। তবে আমরা নিশ্চতি করছি, এমন কোনো ত্রুটি যেন না থাকে যা ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
এমওএস/ইএ/এমএস
What's Your Reaction?