বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার হতে তৎপরতা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তাদের এ তৎপরতা ঠেকাতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সহায়তা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সরকারকে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিনিধি ফাডেলা নোভাক।
বুধবার (১৯ মার্চ) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠক শেষে এনআইডি ডিজি বলেন, ইউএনএইচসিআর-এর কাছে যে তথ্য আছে সেটা আমরা এবং সরকারও চাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি তাদের হয়েছে। সে অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের তথ্য শেয়ার করতে সম্মত হয়েছে ইউএনএইচসিআর। এই ডাটা আমরা কীভাবে পেতে পারি তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
- আরও পড়ুন
- ভোটার হতে গিয়ে রোহিঙ্গা দম্পতি আটক
- রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
- রোহিঙ্গাদের প্রশংসায় ভাসছেন আন্তোনিও-ড. ইউনূস
তিনি বলেন, এই তথ্য আমাদের কাছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নাকি অন্য কোথাও থাকবে, এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার ছিল। এটি চূড়ান্ত হয়েছে যে, এই তথ্য নির্বাচন কমিশনে থাকবে। কীভাবে কোথায় কখন ব্যবহার করতে হবে, এ নিয়ে আরও বসতে হবে।
‘একটি টেকনিক্যাল টিম আজকে করা হয়েছে। সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এটি সমন্বয় করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এবং ওনাদের প্রতিনিধি থাকবে সেই টিমে। তারা বৈঠক করবেন। এই ডাটা যখন পাবো তখন ব্যবহার করতে পারবো।’
এনআইডির ডিজি আরও বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রোহিঙ্গারা আমাদের সিস্টেমে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। যত দ্রুত এই ডাটা পাবো তত সুবিধা হবে। আমাদের সুবিধা বহুমাত্রিক। রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে আর এতো কষ্ট করতে হবে না। কেননা, আমরা ডাটা দেবো, ওই ডাটার সঙ্গে মিলে গেলেই আমারা বুঝবো রোহিঙ্গা। সুতরাং এটি আমাদের প্রথমেই কাজে লাগবে।
তিনি আরও বলেন, তাদের (ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদল) সঙ্গে বৈঠকে পাসপোর্টের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পাসপোর্ট আমাদের এনআইডিটা ইউজ করে। যদি এনআইডিকে আমরা ক্লিন করতে পারি তাহলে অনেক ভালো হবে।
এই ডাটাবেজ পেলে যারা সার্ভারে ঢুকে গেছে বলে অভিযোগ আছে, তাদের কি শনাক্ত করা যাবে, এমন প্রশ্নে এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ডেফিনেটলি। প্রথম হচ্ছে শনাক্ত করা, শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে তো আমরা এগুলো (এনআইডি) লক করে দেবো। আমরা জানবার বা বুঝবার পরপর লক হয়ে যাবে। তারা তো আমাদের নাগরিক নয়। সুতরাং জানবার সঙ্গে সঙ্গে লক হয়ে যাবে।
‘যেহেতু বারবার আলোচনা হচ্ছে এই সিস্টেমে রোহিঙ্গারা রয়েছে। একজন থাকুক, একশ জন থাকুক বা এক হাজার জন, আমরা তো জানি না। একজন থাকলেও তো বাদ দিতে হবে।’
অনেক বাংলাদেশি ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিইসি, তাদের বিষয়ে কী হবে- জানতে চাইলে এনআইডির ডিজি বলেন, আমি এটি নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে বলে উনারা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছেন। সার্ভার কার কাছে থাকবে এখনো ঠিক হয়নি। উনাদের টেকন্যালিকল লোক অনেক অভিজ্ঞ। আমরাও আমাদের ডাটা অনেক সিকিউরডভাবে সংক্ষরণ করতে পারছি।
- আরও পড়ুন
- ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুঃখ গাঁথা শুনছেন জাতিসংঘ মহাসচিব
- ডিসেম্বরে নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যুও বড় চ্যালেঞ্জ: ড. ইউনূস
তিনি বলেন, আমরা ইমিডিয়েটলি তথ্যের জন্য অনুরোধ করেছি। উনারা সম্মত হয়েছেন, তবে অনেকগুলো বৈঠক করা লাগবে। আমরা পরস্পরকে বুঝতে একটু সময় লাগবে। তথ্যগুলো এমনভাবে দেবে যেন রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে পারি। কাজেই পুরো ডাটা পেতে হবে।
‘রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাছেই এটি আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই। আমার বাবা-মার তথ্য তো সার্ভারে আছে। কাজেই আমি ভোটার হতে এলে আর চেক করার দরকার নেই’- যোগ করেন এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস