আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের গ্রামগঞ্জ। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও প্রার্থীরা।
প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনে নির্বাচন এলেই বিভিন্ন দেশ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দেশে আসেন। নিজ নিজ গ্রাম, তাদের নিজস্ব বলয়, পঞ্চায়েত নিয়ে বৈঠক করেন। আর মনোনয়ন না পেলে আবারও ফিরে যান প্রবাসে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনের আওয়াজ উঠতেই দেশে আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকা গঠিত হয়। ওই বছর বৃহত্তর সিলেট জেলাকে বিভক্ত করে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন-
পুরোনো ঘাঁটিতে শক্তিশালী বিএনপি, সরব অন্যরা
গাজীর আসনে বিএনপিতে প্রার্থীজট, সুসংগঠিত জামায়াত
জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের ইসমত আহমেদ চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আব্দুল মোছাব্বির ও ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী জয়ী হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া জয় পান। তবে ১৯৯৬ সালের জুন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী এই আসনে নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যু হলে ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আলোচনা আরও জোরালো হচ্ছে।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু প্রবাসী নেতা নির্বাচনের সময় দেশে আসেন। তারা প্রচার-প্রচারণা চালান। প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। মাঠে সরব হয়ে ওঠেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পেলে তারা ফের বিদেশে চলে যান। এরপর পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী এই আসনে দলটির সিলেট মহানগরের সেক্রেটারি শাহজাহান আলীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপির রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি (যুক্তরাজ্য প্রবাসী) আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া। তিনি এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। বিষয়টি তখন সারাদেশে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।
তবে সুজাত মিয়াকে টপকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান মুখলিস। এছাড়া দলে নিজের বলয় তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী।
আরও পড়ুন-
আড়াইহাজারে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, মাঠে আছে জামায়াত-এনসিপি
এরইমধ্যে লন্ডন থেকে শেখ সুজাত মিয়া ও শিকাগো থেকে শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু দেশে এসেছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পরই দেশে এসেছিলেন মুখলেছুর রহমান মুখলিস। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন।
এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াও প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জীবনও প্রার্থী হতে পারেন এ আসন থেকে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ-বাহুবলের মানুষের সঙ্গে কাজ করে আসছি। দলমত সবার সঙ্গে আমার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। এখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। দলের ক্রান্তিকালে আমি কর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছি। তাছাড়া ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনে এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হই। তাই দল যদি আমাকে মূল্যায়ন করে ইনশাআল্লাহ তারেক রহমানকে এ আসন উপহার দেবো।’
আরও পড়ুন-
পলাতক শামীম ওসমানের আসনে আলোচনায় যারা
পলাতক ওসমান পরিবার, খেলায় এগিয়ে বিএনপি
নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নবীগঞ্জ পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র। তিনবার প্যানেল মেয়র ছিলাম। সে হিসেবে জনগণের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমি বিগত দুটি নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও চাইবো। আশা করি দল আমাকে বিবেচনা করবে।’
শিকাগো বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল আলী নান্টু বলেন, ‘যদি নির্বাচনের পরিবেশ ও সময় আসে এবং দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আমি জনগণের সেবা করতে চাই। তাই জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান মুখলিস বলেন, ‘আমি আগামী দিনে বাহুবল-নবীগঞ্জ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারি। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে আমাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করেও আমি এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। আমি বিশ্বাস করি আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দিলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারবো।’
ড. রেজা কিবরিয়ার ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী শাহজাহান আলী বলেন, ‘দল দুই বছর আগেই আমার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সমস্যা লাঘবে কাজ করে আসছি। দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। সুযোগ পেলে জনগণের খেদমতে কাজ করতে চাই। আমার বিশ্বাস জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জীবন বলেন, ‘আমরা ছোট দল হলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী চাচ্ছেন যেন কোনো জোটে না গিয়ে একক নির্বাচন করি। এতে যদি আমরা বিরোধী দলও হতে পারি, তাও ভালো। হবিগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে আমার মনে হচ্ছে এখনও নির্বাচনের পূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি।’
এফএ/এমএমএআর/এএসএম

3 hours ago
4









English (US) ·