ভোটের হিসাব বদলে দেবে আঞ্চলিক দলের সমর্থন
জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য থাকলেও রাঙ্গামাটির ক্ষেত্রে বরাবরই ‘ভোট ফ্যাক্ট’ আঞ্চলিক দল। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনেই পাল্টে যায় ভোটের হিসাব-নিকাশ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের মাঠে দলীয় সভা-সমাবেশে ব্যস্ত বড় দলগুলো। দলগুলো নিজেদের গোছানোর পাশাপাশি দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছে। তবে আঞ্চলিক দলের প্রার্থী নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি জেএসএস বা ইউপিডিএফ। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। দুটি পৌরসভা, ১০টি উপজেলা ও ৫০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদসীয় আসন রাঙ্গামাটি-২৯৯। পাহাড়ি এই জেলার বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় ভোটারদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। পছন্দের প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ আনন্দ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান। আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আলোচনায় আছেন দলটির সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ
জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য থাকলেও রাঙ্গামাটির ক্ষেত্রে বরাবরই ‘ভোট ফ্যাক্ট’ আঞ্চলিক দল। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনেই পাল্টে যায় ভোটের হিসাব-নিকাশ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের মাঠে দলীয় সভা-সমাবেশে ব্যস্ত বড় দলগুলো। দলগুলো নিজেদের গোছানোর পাশাপাশি দলের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছে। তবে আঞ্চলিক দলের প্রার্থী নিয়ে এখনো মুখ খোলেনি জেএসএস বা ইউপিডিএফ।
আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। দুটি পৌরসভা, ১০টি উপজেলা ও ৫০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদসীয় আসন রাঙ্গামাটি-২৯৯। পাহাড়ি এই জেলার বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় ভোটারদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। পছন্দের প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ আনন্দ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান। আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আলোচনায় আছেন দলটির সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ঊষাতন তালুকদার।
বর্তমানে এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামার জন্য দলীয় একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত ইসলামী। আসনটিতে দলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোখতার আহাম্মেদ। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ আরও কিছু ছোট দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত নির্বাচনের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে টানা ছয়বার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার। ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে চারটিতেই বিজয়ী হন দীপংকর। বাকি দুটি নির্বাচনের মধ্যে একটিতে আঞ্চলিক দল ও আরেকটিতে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার বিএনপির প্রার্থী নাজিম উদ্দিনকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির নাজিম উদ্দিনকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের বাঁক পাল্টে যায়। ওই নির্বাচনে দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে ভোটযুদ্ধে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী মনিস্বপন দেওয়ান।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের জয়ী হয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন দীপংকর তালুকদার। ওইবার তিনি বিএনপির প্রার্থী মৈত্রী দেওয়ানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন।
তবে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই ঊষাতনের কাছে ভোটে হারেন আওয়ামী লীগের ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ দীপংকর তালুকদার। সবশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজের ‘শেষ নির্বাচন’ হিসেবে মাঠে নামেন দীপংকর। এ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার ও বিএনপির মনিস্বপন দেওয়ান। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দেওয়ান-তালুকদারকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো এমপি হন দীপংকর তালুকদার।
আরও পড়ুন:
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তরুণদের নিয়ে টক্কর দিতে চায় এনসিপি
১০ ফেব্রুয়ারি ভোটের ইঙ্গিত ইসির
ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, চাপে ‘নতজানু হবে না’ ইসি
বিএনপির দখলে নির্বাচনি মাঠ, থেমে নেই জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
জামায়াতের ‘দুর্গে’ জয় পেতে চায় বিএনপি
২০০৮ সাল থেকে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) দলীয় সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ায় রাঙ্গামাটির নির্বাচনে আঞ্চলিক দল আওয়ামী লীগের কাছে বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে জেএসএস জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে এলেও ২০০৮, ২০১৪ ও সবশেষ ২০১৮ সালের নিজেরাই প্রার্থী দিয়েছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে দলটি। তবে ২০২৪ এর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রত্যাহার করে নেন জনসংহতি সমিতির নেতা ঊষাতন তালুকদার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে জেএসএস সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার বিজয়ী হলেও সেই নির্বাচনে আরও দুটি আঞ্চলিক দল স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে ইউপিডিএফ-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন সচিব চাকমা এবং জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সুধাসিন্ধু খীসা। তবে বিগত দুই নির্বাচনে আর প্রার্থী দেয়নি জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ।
অন্যদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগকে। এবারের নির্বাচনেও জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নিজেদের কোনো প্রার্থী দেবে না এবং সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে সমর্থন জানাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে সমর্থন জানিয়েছিল প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আরেক ‘হেভিওয়েট’ আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউনাইটেড)। সেসময়ে জেএসএস-ইউপিডিএফের ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ থাকায় রাঙ্গামাটি আসনে একত্রে ভোট করেছিল দুটি আঞ্চলিক দলই। তবে বর্তমানে ফের জেএসএস-ইউপিডিএফের রাজনৈতিক বৈরিতা চলছে। যে কারণে এবারের নির্বাচনে একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ইউপিডিএফ বলছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা বরাবরই গণতন্ত্রমুখী।
স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের সংসদ নির্বাচনেও বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াবে আঞ্চলিক দল। বিএনপি যদি আঞ্চলিক দলের সমর্থন নিয়ে ভোট করতে পারে, সে ক্ষেত্রে জেতার সম্ভাবনা শতভাগ। কিন্তু আঞ্চলিক দল নিজেরাই ভোটে অংশ নিলে দ্বিমুখী লড়াই হবে বিএনপি ও আঞ্চলিক দলের মধ্যে।
রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমরা জনগণের পাশে ছিলাম। আশা করছি জনগণ তার মূল্যায়ন করবে। আমাদের কেন্দ্রঘোষিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে দীপেন দেওয়ানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। এবারের নির্বাচনে আমরা আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাই।’
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে লড়তে হলে এবং নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে আঞ্চলিক দলের সমর্থন নেওয়াটা খুব জরুরি। রাঙ্গামাটি ‘পাহাড়ি অধ্যুষিত’ এলাকা হিসেবে স্থানীয় কমিউনিটির ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতে পারলেই জেতা সহজ হবে বিএনপির প্রার্থীর।
২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান বলেন, ‘দল আমাকে মনোনীত করে আমার দীর্ঘদিনের ত্যাগের মূল্যায়ন করেছে। রাঙ্গামাটিতে বিএনপি সবসময় ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের সব নেতাকর্মীকে নিয়ে এরইমধ্যে ১০টি উপজেলার মানুষের কাছে গিয়েছি। নির্বাচন শুরু হলে আবারও জেলার সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে যাবো। রাঙ্গামাটির মানুষ এবার ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করবে বলে আমি আশাবাদী।’
এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অমর কুমার দে, মিজানুর রহমান এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কেএম পারভেজ তালুকদার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা ও ইসলামী আন্দোলনের জসিম উদ্দিন প্রার্থী হয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে এসব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা নেই। আলোচনা নেই বাঙালিভিত্তিক সংগঠনের প্রার্থী নিয়েও। তবে ৩৪ বছর পর এবার আবারও এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর।
রাঙ্গামাটি আসনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোখতার আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জামায়াত ১৯৮৬ সালে প্রথম এই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এরপর ১৯৯১ সালেও অংশ নিয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত এককভাবে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ নম্বর রাঙ্গামাটি আসনে আমি জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।’
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় মোট ভোটার চার লাখ ৯১ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৬ হাজার ২৪২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ত্রয়োদশ নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত ভোটার বেড়েছে ১৭ হাজার ৯৫২ জন।
এসআর/এমএস
What's Your Reaction?