তারুয়া সমুদ্রসৈকত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর মোহনায় হওয়ায় প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় করেন তারুয়া সমুদ্রসৈকতে। এ ছাড়া প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বেশ ভিড় থাকে। তারুয়া সমুদ্রসৈকতের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের ম্যানগ্রোভ বন, ঝাউবন, পোড়া বন ও লাল কাঁকড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চর বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাহে আলম ফরাজী জানান, তারুয়া সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য, ম্যানগ্রোভ বন, ঝাউবন ও লাল কাঁকড়া দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন। পাশপাশি বিভিন্ন দেশ থেকেও পর্যটকরা আসেন। কেউ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আসেন। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। এ সময় পুরো ঢালচর ইউনিয়নই জমজমাট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে খাবারের হোটেলে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। হোটেল মালিকরাও বিভিন্ন ধরনের মাছ, কাঁকড়া থেকে শুরু করে হরেক রকম খাবারের ব্যবস্থা করেন।
তিনি জানান, পর্যটকরা এসে কেউ মোটরসাইকেল করে ঘুরে বেড়ান। কেউ আবার স্পিড বোট এবং ট্রলারে করে ঘুরে বেড়ান। এতে আয়-রোজগার ভালো হয় মোটরসাইকেল, স্পিড বোট ও ট্রলার মালিকদের। তারুয়া সমুদ্রসৈকতে আছে সেভেন স্টার নামে একটি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। সেখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুন্দর পরিবেশ আছে। এ ছাড়া স্থানীয়রা পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে সহযোগিতা করেন।

মোটরসাইকেল চালক মো. নুরুউদ্দিন ও সেলিম জানান, সারাবছর তারা মোটরসাইকেল চালিয়ে যে আয় করেন, তার চেয়ে ২০-২৫ গুণ টাকা নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আয় করেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মোটরসাইকেল ঠিকঠাক করে রেখেছেন।
তারা জানান, ঢালচরে মোটরসাইকেল ছাড়া বিকল্প যানবাহন না থাকায় তাদের চাহিদা বেশি। তবে বর্তমানে ঢালচরের আনন্দ বাজার থেকে শুরু করে তারুয়া সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার একমাত্র ইটের সড়কটির বেহাল দশা। এ বছর পর্যটকদের নিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে কষ্ট হবে বলে দাবি করেন তারা।

আরও পড়ুন
পাহাড় ও সমুদ্রের খোঁজে আমরা
যাদুকাটা থেকে নীলাদ্রি: একদিনের তাহিরপুর যাত্রা
তারুয়া সমুদ্রসৈকতের সেভেন স্টার হোটেল ও রেস্টুরেন্টর মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতাব্বর বলেন, ‘এ বছর শীত মৌসুমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। সাজানো হয়েছে নতুন করে। তারুয়া সমুদ্রসৈকতের সাথেই আমার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। চাহিদা অনুযায়ী রান্না করে দেওয়া হয়। হোটেলের পরিবেশ সুন্দর। সিঙ্গেল ও ডাবল রুম আছে। আছে তাঁবু টানিয়ে সপরিবারে থাকার ব্যবস্থা।’

চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘তারুয়া সমুদ্রসৈকত ভোলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সৌন্দর্য উপভোগ করতে সমুদ্রসৈকতের পাশে বন বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার ঝাউ গাছ লাগানো হয়েছে। সেগুলো এখন বড় হয়েছে। সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য ২১টি বেঞ্চ দিয়েছি। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও কিছু পরিকল্পনা করেছি। যা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।’
সমুদ্রসৈকতে যা দেখবেন
তারুয়া সমুদ্রসৈকতে সাগরের ডেউ, হিমেল বাতাস, পরিযায়ী পাখির কলকাকলি, ঝাউবন, ম্যানগ্রোভ বন, লাল কাঁকড়া, হরিণ, জেলেদের ইলিশ শিকারের দৃশ্য।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলা সদরের ইলিশা কিংবা চরফ্যাশনের বেতুয়ার লঞ্চে উঠবেন। ইলিশার লঞ্চে এলে সিএনজিতে করে ভোলা বাসস্ট্যান্ড যাবেন। সেখান থেকে সরাসরি কিংবা লোকাল বাসে অথবা সিএনজিতে চরফ্যাশন যাবেন। চরফ্যাশন থেকে মোটরসাইকেল কিংবা বাসে চলে যাবেন দক্ষিণ আইচা বাজারে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে করে মাত্র ১০-২০ টাকায় চর কচ্ছপিয়া ঘাটে যাবেন। এরপর স্পিড বোট, ট্রলার অথবা লঞ্চে চলে যাবেন ঢালচর। ঢালচর নেমে মোটরসাইকেলে মাত্র ৪০ টাকায় তারুয়া সমুদ্রসৈকতে যাবেন। এ ছাড়া চরফ্যাশনের বেতুয়া থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে শহরে যেতে হবে। সেখান থেকে যে কোনো বাহনে যাওয়া যাবে তারুয়া সমুদ্রসৈকতে।
থাকা-খাওয়া
তারুয়া সমুদ্রসৈকতের সাথে আছে সেভেন স্টার নামে একটি হোটেল। হোটেলে সিঙ্গেল রুম ৫০০ টাকা ও ডাবল রুম ১ হাজার টাকা। সিঙ্গেল তাঁবু ৫০০ টাকা ও সপরিবার তাঁবু ১ হাজার টাকা। খাওয়ার খরচ কম। তারুয়া সমুদ্রসৈকত ছাড়াও আনন্দ বাজার ও মাঝের চর বাজারে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে কম খরচে নদী ও সাগরের তাজা মাছ খেতে পারবেন।
এসইউ/জেআইএম

14 hours ago
5









English (US) ·