প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ জেলা ভোলা। জেলার তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস। এ কারণে গ্যাসনির্ভর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বেশকিছু কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত কল-কারখানার অভাবে বেকারত্ব থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলছে না জেলাবাসীর।
জীবিকার তাগিদে ভোলা থেকে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিভিন্ন চাকরি ও চুক্তিভিত্তক কাজ করছেন লাখ লাখ নারী-পুরুষ। পরিসংখ্যান ব্যুরো অফিসের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় বেকার রয়েছেন ৫৪ হাজার ৫২৬ জন।
জেলার শেলটেক সিরামিক ফ্যাক্টরিতে কর্মরত প্রায় দেড় হাজার পুরুষ। এদের মধ্যে ভোলা জেলার বাসিন্দা ৬০ শতাংশ পুরুষ। কাজী ফার্মসে কর্মরত পাঁচ শতাধিক মানুষ। সেখানেও জেলার ৫০-৬০ শতাংশ পুরুষ কর্মরত।
‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম গেলে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়িতে অসুস্থ মা থাকায় যাওয়া হচ্ছে না। ভোলায়ও শিল্প-কারখানা নেই যে কোনো কাজ করবো। কাজের অভাবে সংসার ঠিকমতো চলে না।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভোলা জেলার উপ-পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান জানান, ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযারী, ভোলার সাত উপজেলায় জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৪৪৪ জন। এদের মধ্যে ১৫ বছরের ওপরে জনসংখ্যা ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৪ জন। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৯ জন। আর নারী ছয় লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ জন।
- আরও পড়ুন:
- তেলাপোকার উৎপাতে বেডে থাকা দায় রোগীদের
- যেভাবে মনপুরার ৫০ টাকার ডাব ঢাকায় এসে হয় ১৫০ টাকা
- ‘বসতঘর তো না, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে’
তিনি আরও জানান, সরকারি চাকরি করেন; বেতন, মজুরির বিনিময়ে অথবা লাভের জন্য বা নিজস্ব ভোগের জন্য কাজ করেন বা কাজে সাহায্য করেন সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা—এমন পুরুষ ও নারীর সংখ্যা জেলায় আট লাখ ২ হাজার ৮৬ জন। ৫৪ হাজার ৫২৬ জন সম্পূর্ণ বেকার। এদের মধ্যে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন পুরুষ ও ২৯ হাজার ৩৮২ জন নারী। বাকি সাড়ে চার লাখের মধ্যে শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের ব্যক্তিরা রয়েছেন।
ভোলা পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলমান পাড়ার বাসিন্দা মো. আল আমিন। তিনি ভোলা সরকারি কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। দুই বছর আগে তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে বেসরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। কবে চাকরি মিলবে জানেন না তিনি। এ অবস্থায় চরম হতাশায় দিন কাটছে তার।
‘ভোলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভর করে অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে শতভাগ বেকারত্ব দূর হবে। এজন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোলায় যদি গ্যাসনির্ভর পর্যাপ্ত শিল্প-কারখান গড়ে উঠতো, তাহলে আমার মতো হাজারও শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু গড়ে ওঠেনি। আমাদের ভোলায় কর্মসংস্থানের খুবই অভাব।’
ভোলা পৌর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা মো. তসলিম। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘মাস্টার্স পাস করেও এখন পর্যন্ত চাকরি জোগাতে পারিনি। আমি এখন পরিবারের বোঝা।’
৬ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মো. রাসেল। তিনি বিদ্যুৎ ও স্যানিটারির কাজ জানেন। কিন্তু ভোলায় এই কাজ পাওয়া খুবই কষ্টের। একদিন কাজ পেলে ৭-৮ দিন পাওয়া যায় না। তাই বেশিরভাগ সময়ই বেকার থাকতে হয়।
- আরও পড়ুন:
- জীবিকার তাগিদে শ্রমিকরা ছেড়েছেন শিল্পাঞ্চল
- লাভ সীমিত, সংসার চালাতে হিমশিম হাতপাখা তৈরির কারিগররা
- সংকটে শাঁখা শিল্প, পেশা বদলাচ্ছেন কারিগররা
রাসেল বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম গেলে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু বাড়িতে অসুস্থ মা থাকায় যাওয়া হচ্ছে না। ভোলায়ও শিল্প-কারখানা নেই যে কোনো কাজ করবো। কাজের অভাবে সংসার ঠিকমতো চলে না।’
‘এরইমধ্যে বেজা আমাদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়েছে। আমরা প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। আশা করছি, ভোলায় বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। জেলার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’
ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত শান্ত জানান, তার বাবা অসুস্থ। পরিবারের আর্থিক সংকট দেখা দিলে তিনি জেলায় চাকরি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোনো চাকরি পাননি। বাধ্য হয়ে দুই বছর আগে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।
শান্ত জানান, তার মতো লক্ষাধিক শিক্ষিত ও অশিক্ষিত নারী-পুরুষ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের চাকরি ও কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
ভোলা সরকারি মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক ড. আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোলা একটি সম্ভাবনাময় জেলা। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভর করে অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে শতভাগ বেকারত্ব দূর হবে। এজন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জাগো নিউজকে বলেন, ভোলায় প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে অনেক শিল্প-কারখান গড়ে ওঠা সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) চিঠি পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে বেজা আমাদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়েছে। আমরা প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। আশা করছি, ভোলায় বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। জেলার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
এসআর/এএসএম