শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও কর আরোপকে ‘আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দলীয় কার্যালয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এ দাবি জানান।
সাইফুল হক বলেন, অস্বাভাবিকভাবে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও কর আরোপের সিদ্ধান্ত বাজারের আগুনে পুড়তে থাকা মানুষের কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ যখন দিশাহারা, তখন এই পদক্ষেপ কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ আরও চরমে নিয়ে যাবে। এসব পদক্ষেপ একদিকে গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেবে; অন্যদিকে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব আয়ের অনেকগুলো সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারকারীদের ধরতে আমরা দৃশ্যমান ও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ কোনো তৎপরতা নেই। দুর্নীতিবাজ-দুর্বৃত্ত মাফিয়াদের কাছ থেকে তাদের অবৈধ অর্থবিত্ত উদ্ধারে গত ক’মাসে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। তাছাড়া জ্বালানি খাতসহ নানা ক্ষেত্রে রয়েছে সীমাহীন সিস্টেম লস ও দুর্নীতি। কর ফাঁকি রোধ এবং খেলাপি ঋণ ও অবৈধ অর্থবিত্ত সামান্যও যদি উদ্ধার করা যায়- তাহলে বিদ্যমান রাজস্ব সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর বাইরে অপ্রয়োজনীয় কিছু মেগা প্রকল্প বন্ধ, বিলাসদ্রব্যের আমদানি সীমিত করাসহ নানাভাবে আর্থিক সংকট উত্তরণের সুযোগ রয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের ব্যর্থতার দায়ে মানুষ শাস্তি পেতে পারে না। আইএমএফ এর পরামর্শে নেওয়া নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের ওপর ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহবান জানাই।
তিনি বলেন, পাঁচ মাস পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও জনগণের নজিরবিহীন বিপুল সমর্থনকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না। তাদের প্রতি জনগণের বিরাট আস্থার মর্যাদাও তারা রাখতে পারছেন না। মনে হয় মাঝেমধ্যে তারা খেই হারিয়ে ফেলছেন। কাজের অগ্রাধিকারও তারা ঠিক করতে পারছেন না।
সাইফুল হক বলেন, বাজার পরিস্থিতি এখনো অনেকটা বেসামাল। সরকার কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভালো নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে আমরা কোনোভাবেই পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ভূমিকায় দেখতে চাই না। সরকারের সাম্প্রতিক এসব পদক্ষেপ বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি। আমরা আশা করব, সরকার আমলাতান্ত্রিকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যাহার করবেন। ভ্যাট ও করের বোঝা প্রত্যাহারসহ জনগণের জীবন-জীবিকার জরুরি সমস্যা সমাধানের দাবিতে আগামী ১৯ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে সমাবেশ করবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক মৃদুল বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর কমিটির বাবর চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।