মতিউরকে সোনালী ব্যাংক থেকে সরাতে নির্দেশ

3 months ago 43

‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসার পর কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ হারানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) ড. মো. মতিউর রহমানকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর পাঠানো এ নির্দেশনায় সই করেছেন যুগ্ম সচিব মীনাক্ষী বর্মন। নির্দেশনার অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভরনকেও দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ড. মো. মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদ থেকে অপসারণের সুপারিশসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এদিকে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে তার জায়গায় ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে। তিনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য (টেকনিক্যাল)।

সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

উপসচিব মকিমা বেগমের সই করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারি করা আদেশে উল্লেখিত হারে ও শর্তে কার্যভার ভাতা পাবেন। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ শব্দদ্বয় যোগ করবেন।

কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করা হলেও তার জন্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা কোনো কক্ষ নেই। এমনকি তার বসার জন্য কোনো চেয়ার-টেবিলও নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর তিনি মন্ত্রণালয়েও আসেননি। তবে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি যোগদানপত্র পাঠিয়েছেন।

‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসার পর মতিউর রহমানকে সর্বশেষ ঈদের দ্বিতীয় দিন (১৮ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ইন্টারভিউতে দেখা যায়। এরপর রাজধানীর বসুন্ধরা ও ধানমন্ডিসহ তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিলেও তার সন্ধান মেলেনি। এমনকি ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর এনবিআর কার্যালয়ে আসেননি।

এদিকে, মতিউরের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গুঞ্জন রয়েছে, রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর ভারতে চলে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এরপর তিনি ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।

জানা গেছে, ঈদের পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া চলে গেছেন ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত মতিউরের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত, মেয়ে ইফতিমা রহমান মাধবী ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আকতার। ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মীর সন্তান।

অন্যদিকে, মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তার ছেলে দেশে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, লায়লা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। এ পদে গত ২৯ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে সংঘর্ষের কারণে ভোট হয়নি। লায়লা উপজেলা নির্বাচনে এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী।

এদিকে গতকাল রোববার সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, পরিচালক সরকারি পোস্ট। অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি ইস্যু না করলে চূড়ান্ত অপসারণ হবে না। তবে মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে তাকে (মতিউর) সরানো হবে। সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকে তাকে সরানো হয়েছে। চূড়ান্ত অপসারণ চিঠি ইস্যুর পর। তবে এখন থেকে মতিউর রহমান সোনালী ব্যাংকের কোনো সভায় থাকতে পারবেন না।

সম্প্রতি মতিউরপুত্র ইফাতের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এছাড়াও তিনি ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেন বলে খবর প্রকাশ হয়।

এরপর থেকে ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন এবং মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি থাকার তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। পুঁজিবাজারেও রয়েছে তার মোটা অংকের বিনিয়োগ।

এদিকে, মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমদ তৌফিকুর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সোমবার এ আদেশ দেন।

এমএএস/এমকেআর/জেআইএম

Read Entire Article