মধ্যপ্রাচ্যে ভালো-মন্দের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

গত কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বিশ্লেষকেরা সাধারণত হতাশাবাদী অবস্থানই নিয়েছেন। সবশেষ দুই বছর সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে এসে কিছুটা আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। গাজায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা সাময়িক স্বস্তি এনেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ইরানে হামলা পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয়নি, আর সিরিয়াও এখনো সর্বাত্মক সাম্প্রদায়িক গৃহযুদ্ধে জড়ায়নি। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন অগ্রগতির সম্ভাবনা তৈরি করছে, অন্যদিকে তেমনি বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সম্ভাব্য ইতিবাচক দৃশ্যপট সবচেয়ে আশাবাদী পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি উদ্যোগে সক্রিয় থাকবেন। এতে আশ্বস্ত হয়ে আরব ও মুসলিম দেশগুলো সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে পারে এবং একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠিত হতে পারে। পুনর্গঠনের স্বার্থে গাজায় ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য হতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থায়নে গাজার পুনর্গঠন শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ভালো-মন্দের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

গত কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বিশ্লেষকেরা সাধারণত হতাশাবাদী অবস্থানই নিয়েছেন। সবশেষ দুই বছর সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকাংশেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে এসে কিছুটা আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। গাজায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা সাময়িক স্বস্তি এনেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ইরানে হামলা পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয়নি, আর সিরিয়াও এখনো সর্বাত্মক সাম্প্রদায়িক গৃহযুদ্ধে জড়ায়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ একদিকে যেমন অগ্রগতির সম্ভাবনা তৈরি করছে, অন্যদিকে তেমনি বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সম্ভাব্য ইতিবাচক দৃশ্যপট

সবচেয়ে আশাবাদী পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি উদ্যোগে সক্রিয় থাকবেন। এতে আশ্বস্ত হয়ে আরব ও মুসলিম দেশগুলো সেখানে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে পারে এবং একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠিত হতে পারে। পুনর্গঠনের স্বার্থে গাজায় ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য হতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থায়নে গাজার পুনর্গঠন শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার দীর্ঘদিনের দাবিতে বাস্তব রূপ নিতে পারে। মাহমুদ আব্বাসের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মারওয়ান বারগুতির মতো কোনো নেতা গাজা শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।

ইসরায়েলে একই সময়ে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হলে একটি মধ্যপন্থি সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে। এতে সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে অ-আগ্রাসন চুক্তি এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে নতুন শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর পথ খুলে যেতে পারে, যা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করারও সুযোগ সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে, ইরানে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির মৃত্যুর পর কোনো সংস্কারপন্থি নেতৃত্ব ক্ষমতায় এলে দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোয় পরিবর্তন আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হলে তা আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে পারে।

ভয়াবহ নেতিবাচক দৃশ্যপট

তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত দিকেও যেতে পারে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন—উভয় সমাজেই শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতায় হামাস অস্ত্র ত্যাগে অস্বীকৃতি জানাতে পারে এবং গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে। ফলে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন ব্যর্থ হবে এবং ইসরায়েল ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ আবার ছড়িয়ে পড়লে মিশরের দিকে শরণার্থী স্রোত তৈরি হতে পারে এবং সিনাই উপদ্বীপে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। একই সময়ে ইসরায়েল ইরানে আবার হামলা চালালে তা উপসাগরীয় দেশগুলোকেও সংঘাতে টেনে আনতে পারে। এতে আব্রাহাম চুক্তি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

ইরানে কট্টরপন্থি নেতৃত্ব ক্ষমতায় এলে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা শুরু হতে পারে। সিরিয়ায় কুর্দি ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার অজুহাতে ইসরায়েলে নির্বাচন স্থগিত হলে পশ্চিম তীরে নতুন করে ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

সবচেয়ে সম্ভাব্য বাস্তবতা

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা সম্ভবত এই দুই চরম অবস্থানের মাঝামাঝি কোথাও অবস্থান করবে। গাজায় বড় যুদ্ধ হয়তো আর শুরু হবে না, তবে পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠনও এগোবে না। শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠিত না-ও হতে পারে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ছোট আকারের সংঘর্ষ চলতে থাকবে, আর গাজার প্রশাসন কার্যত দুর্বল অবস্থায় থাকবে।

ইসরায়েলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটবে না, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না, তবে পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধও হয়তো এড়ানো যাবে।

সুত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow