মনের শান্তি ফিরিয়ে আনার টেকনিক

1 hour ago 3

আমরা সবাই জীবনের নানা ব্যস্ততা, চাপ, প্রতিযোগিতা আর অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে চলি। প্রতিদিনের যান্ত্রিক জীবনে মনে অশান্তি জমে ওঠে, মন হয় ভারী। অথচ একটু সচেতন হলে, আর কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই আমরা আমাদের ভেতরকার শান্তি ফিরে পেতে পারি।

আজ ২১ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কী করলে মনের ভেতর শান্তি ফিরে পাবেন।

১. প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো

প্রকৃতি মানুষের মনের সবচেয়ে বড় থেরাপি। সবুজ গাছের ছায়া, পাখির ডাক, নদীর কলকল ধ্বনি কিংবা হালকা বাতাস এসব মুহূর্তেই এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। সকালে বা বিকেলে ১৫-২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা, গাছপালার যত্ন নেওয়া, বা ছাদবাগানে কিছুক্ষণ বসে থাকা মানসিক অশান্তি কমিয়ে আনে।

২. ধর্মীয় চর্চা

মানুষের অন্তরে প্রশান্তি আসে বিশ্বাস থেকে। যে যেই ধর্মের অনুসারী হোক না কেন, নিয়মিত ধর্মীয় চর্চা মনকে শান্ত করতে পারে। ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ জীবনের অনিশ্চয়তা ও কষ্টের মাঝেও ভরসা পায়, যা মানসিক শান্তির অন্যতম উৎস।

৩. প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো

মনের অশান্তি প্রায়ই একাকীত্ব থেকে আসে। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো মনকে হালকা করে দেয়। একসঙ্গে গল্প করা, হাসাহাসি করা কিংবা একসঙ্গে খাবার খাওয়া - এসব ছোট ছোট মুহূর্তই জীবনে আনন্দ যোগ করে। প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হলে মানসিক প্রশান্তিও বেড়ে যায়।

৪. সৃষ্টিশীল কাজে মন দেওয়া

ছবি আঁকা, গান, নাচ, রান্না বা লেখালেখি - যে কাজটি করতে ভালো লাগে সেটিতেই মন দেওয়া মনের চাপ কমায়। সৃষ্টিশীল কাজ একদিকে যেমন আনন্দ দেয়, অন্যদিকে নিজের ভেতরের আবেগ ও অশান্তি বের করে আনার সুযোগ করে দেয়।

৫. বই পড়া

আপনি কি বইপ্রেমী? যদি হন, তাহলে একটি ভালো বই কখনো কখনো সেরা সঙ্গী হয়ে ওঠে। বইয়ের ভেতর ডুবে গেলে বাইরের কোলাহলকে ভুলে থাকা যায়। সাহিত্যের গল্প, ভ্রমণকাহিনি বা প্রেরণাদায়ক লেখা মনকে শান্ত করে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়।

৬. অন্যকে সাহায্য করা

অন্যকে সামান্য সাহায্য করার মাঝে শান্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। রাস্তায় ক্ষুধার্থ মানুষকে একটু খাবার দেওয়া, প্রতিবেশীর প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো কিংবা সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত হওয়া এসব কর্মকাণ্ড আমাদের ভেতরের ইতিবাচক শক্তি বাড়িয়ে তোলে।

মনের শান্তি ফিরিয়ে আনার টেকনিক

৭. প্রযুক্তি থেকে বিরতি নেওয়া

দিনের বড় একটা সময় আমরা কাটাই মোবাইল, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের সামনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর বা অযথা স্ক্রল করতে করতে অজান্তেই মন হয় অশান্ত। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় মোবাইল থেকে দূরে থাকা এবং নিজের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক শান্তির জন্য জরুরি।

৮. পশু পালন

প্রাণীর সান্নিধ্য থাকলে মানসিক চাপ কমবেই। বিশেষ করে বিড়াল পালন অনেকের জন্য এক ধরনের মানসিক থেরাপি। ছোট্ট এই প্রাণীগুলো যখন খেলা করে, মিউমিউ করে বা মালিকের পাশে গা ঘেঁষে বসে থাকে, তখন এক ধরনের প্রশান্তি অনুভূত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটালে স্ট্রেস কমে এবং একাকীত্ব দূর হয়। তাই অনেকেই বিড়াল পালনকে মনে শান্তি আনার সহজ উপায় হিসেবে বেছে নেন।

৯. সঠিক ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা অনিয়মিত খাবার খেলে শরীর যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি মানসিক অশান্তিও বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাদের মন ও শরীর দুটোই ভালো রাখে।

১০. ইতিবাচক চিন্তা করা

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, নেতিবাচক ভাবনা ও আত্মদোষারোপের কারণে মনে অশান্তি আসে। প্রতিদিন ইতিবাচকভাবে ভাবতে শেখা, ছোট ছোট সাফল্যে খুশি হওয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মনকে প্রশান্ত রাখে।

১১. ধ্যান ও মেডিটেশন

ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক শান্তি আনার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি পদ্ধতি। প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট নীরবে বসে গভীর শ্বাস নেওয়া, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা ও নিজের ভেতরের জগতে প্রবেশ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ অনেকটাই হ্রাস পায়। মেডিটেশন শুধু প্রশান্তি এনে দেয় না, বরং মনোযোগ বাড়ায়, উদ্বেগ কমায় এবং আত্মবিশ্বাস জাগায়।

তথ্যসূত্র: হার্ভার্ড পাবলিক হেলথ, ভেরিওয়েল মাইন্ড, ন্যামি, হাইল্যান্ডস স্প্রিংস ক্লিনিক, নিউজ ইন হেলথ

মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জিকেএস

Read Entire Article