মন্ত্রণালয় থেকে নয়, স্থানীয়দের কথা শুনে হবে সিদ্ধান্ত

1 month ago 15

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যায়ে নয়, বাঁধ নির্মাণসহ মাঠ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে, তাদের কথা শুনে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন।

লোকজন ভারতের বাঁধের বিপরীতে আমাদের দেশেও বাঁধ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘লোকে একবার বাদ দেওয়ার দাবি জানাবে, আবার আরেকবার বলবে বাঁধটি সরিয়ে দাও। কোনটা আসলে আমি গ্রহণ করবো তা বুঝতে আমাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, আমার নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে মন্ত্রণালয় এবং বোর্ড পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত আর হবে না, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে কথা শুনেই সিদ্ধান্তে যাব। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে না শুনে আমিও আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছিল ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ায় বন্যা হয়েছে। বাঁধ খুলে দেওয়ায় নাকি বাঁধ উপচে পানিতে আমাদের এখানে বন্যা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। বন্যাটা হয়তো হতোই, কিন্তু বন্যাতে আমরা বাড়তি কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারতাম, জান-মালের ক্ষতি হয়তো কমাতে পারতাম। যদি আমরা আগাম একটু পূর্বাভাস পেতাম। এর আগেও আমরা উজানের দেশকে অনুরোধ করেছি। দু-তিন দিন আগে দেখলাম, সেখানেও (ভারত) বলা হচ্ছে বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তাব নতুন করে বিবেচনা করার সুযোগ আছে।

‘আমরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমরা বলব, শুধু যে একটি দেশ আমাদের উজানে আছে, তা তো নয় আরও দেশ আছে আমাদের উজানে। সকল উজানের দেশকে আমরা বলব জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রেক্ষিতে আমাদের জরুরি হয়ে গেছে এই তথ্যগুলো আদান-প্রদান করা। বাংলাদেশের যে এতগুলো মানুষ মরে গেলো, এই মৃত্যুর দায় নেওয়াটা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আগে যে আমরা বলেছি সেটার রেফারেন্স দিয়ে আমরা আরেকটা চিঠি উজানের দেশগুলোকে পাঠাবো।’

বন্যাকবলিত কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে যেতে চাই জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ফেসবুকে এক রকম লেখা হয়, এর মধ্যে হয়তো অনেক কিছু ঠিক হতে পারে, অনেক জায়গায় বোঝারও ভুল থাকতে পারে। তাই আমরা সেখানে একটা গণশুনানি করতে চাচ্ছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা এসে একটু বলুক কোথায় বাঁধের কারণে, কোথায় মাছ চাষ করার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথায় তৎপরতা সঠিক সময় না হওয়ার কারণে তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। কীভাবে উজানের দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলে বিষয়টা কার্যকরী হতে পারে?

উজানের দেশের আমাদের বন্যার তথ্য জানানোর বিষয়ে কোনো কথার অভাব ছিল কি না- এ বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আন্তরিকতা যদি থাকতো এই ৫৩ বছর হয়ে গেলো তো, এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়। আমাকে এতটুকু পানি দাও আমাকে ন্যূনতম পানি দাও, সেগুলোর দাবি না। এগুলো খুবই মানবিক দাবি। সেখানে ঘাটতি আছে। সেটা উদ্যোগই হোক বা আন্তরিকতাতেই হোক।

পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি স্থানীয় মানুষের মতামত নিয়ে একটা প্রকল্প নেয়। পরবর্তীতে যদি দেখা যায় এই প্রকল্প যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই মানসিকতা থাকতে হবে যে, সেটা আমরা আবার সংশোধন করব। সেই কথাগুলো গতকালকে অনুশাসন হিসেবে বলে দেওয়া হয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের হেনস্তা করার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনাগুলোকে কোনোভাবেই এনডোর্স (স্বীকৃতি) করে না।’

বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে মামলার বিষয়ে বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মামলা করে আমরা তো সেই ব্যক্তিকে আটকাতে পারবো না। সে কার বিরুদ্ধে মামলা করবে সেটা তার এখতিয়ার। কিন্তু কোনোভাবেই যেন নির্দোষ কেউ হয়রানির মুখোমুখি না হয়, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই নিশ্চিতের চেষ্টা করবে।’

আরএমএম/এমআরএম/এমএস

Read Entire Article