প্রস্তাবিত বন্দর মাশুল নিয়ে গেজেট প্রকাশের আগে শেষ মুহূর্তে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় সব স্টেকহোল্ডারই একযোগে বলেছেন, একসাথে এতবেশি মাশুল বাড়ানো যাবে না। এতে দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা বলেছি- বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। তারপরও বন্দর লাভ করছে। এখন বন্দরের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে মাশুল বাড়ানোর একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা স্টেকহোল্ডারদের পক্ষে বলেছি- যদি বাড়াতে হয়, তাতে গড়ে ১০ শতাংশের বেশি যাতে বাড়ানো না হয়।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বৈঠকের আলোচনার ওপর ভিত্তিতে করে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
অন্যদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ছৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সবাই বলেছেন, ১০ শতাংশের বেশি মাশুল যাতে বাড়ানো না হয়।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা এবং ব্যবসায়ীদের ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলে রপ্তানি এগিয়ে যাবে না। এমনিতে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করেন। গত দুয়েক বছরে অত্যধিকভাবে ডলারের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে বন্দরের সব ধরনের সেবার মাশুলের পরিমাণও বেড়েছে। এখন আবারও বাড়ানো হলে ব্যবসায়ী নতুন করে আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন।’
ছৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হলেও আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বন্দরের ট্যারিফ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিইনি। তবে বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বলেছি। বিশেষ করে আমদানি কনটেইনারগুলো যাতে বাইরে থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়। স্ক্যানিংয়ের সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান হয়। এনিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আরেকটি মিটিং হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আজকের (সোমবার) বন্দরের মাশুল নির্ধারণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্য স্টেকহোল্ডাররা বলেছেন, একসাথে ৪০ শতাংশ মাশুল না বাড়িয়ে, যাতে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়।’
এদিকে প্রায় ৩৯ বছর পর মাশুল বাড়াতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। প্রস্তাবিত হার অনুযায়ী বন্দর সেবায় গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বন্দর স্টেকহোল্ডারদের আপত্তির মুখে মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাবটি আবার পর্যালোচনার জন্যে সোমবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত নতুন মাশুল গত ২৪ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে প্রস্তাবটি গেজেট আকারে প্রকাশের পর্যায়ে ছিল। গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বেশি আকারে নতুন মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের আপত্তির মুখে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নতুন মাশুল কার্যকর হলে বন্দরের আয় বাড়বে গড়ে ৪১ শতাংশ। বন্দরের সব মাশুল নির্ধারিত হয় ডলারে। যে কারণে দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি হলে তার সাথে একইহারে মাশুলের পরিমাণ বাড়বে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মাশুল বাড়ানো হয়েছে কনটেইনার পরিবহনে। এতে প্রতি ২০ ফুটের কনটেইনারে গড়ে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা মাশুল আদায় করে । নতুন রেট কার্যকর হলে কনটেইনারপ্রতি বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। যাতে আমদানি কনটেইনারে বাড়বে ৫ হাজার ৭২০ টাকা। রপ্তানি কনটেইনারে বাড়বে ৩ হাজার ৪৫ টাকা। সবমিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি গড়ে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা মাশুল দিতে হবে।
এমডিআইএইচ/বিএ/জেআইএম