সারা দেশের মন্দিরে মন্দিরে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যা, বাণী আর সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন ভক্তরা। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শুভ্র রাজহংসে চেপে দেবী সরস্বতী আসেন জগতে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, এ বছর পূজার তিথি পড়েছে দুই দিন। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চমী তিথি শুরু হয়েছে, যা সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনসহ সারা দেশে সংগঠনটির ১৭টি অনুমোদিত শাখায় রোববার সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোতে সোমবারও পূজা হবে। এছাড়া সোমবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-মন্ডপে পূজা হবে। ঢাকার বাইরেও সোমবার অধিকাংশ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিহার মহারাজ কালবেলাকে বলেন, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর পঞ্চমী তিথি রোববার শুরু হয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত থাকবে। সে অনুযায়ী বেলুরমঠ অনুমোদিত ঢাকাসহ সারাদেশে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১৭টি শাখায় সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
তিনি আরও বলেন, বেলুরমঠ কর্তৃক অনুমোদিত না হলেও সারাদেশে ভক্তদের দ্বারা পরিচালিত আশ্রম আছে ১৩০টির মতো। সেগুলোতে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী তারা পূজা করবেন।
সোমবার দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করবেন অগণিত ভক্ত। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও এ পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়িতে সাড়ম্বরে সরস্বতী পূজা হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি দেবেন। শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হবে।
এদিকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরস্বতী শান্তির বার্তাবহ। এই দিনের তাৎপর্য ও চেতনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারলে কোথাও হিংসা, বিদ্বেষ ও বৈষম্যের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। তারা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষকে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার কাজে আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাগদেবীর আরাধনা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার পথ সুগম করুক, মনের অন্ধকার দূর করুক- এই কামনা করি। সবার পূজার আয়োজন সুন্দর হোক, সার্থক হোক। সরস্বতী পূজায় প্রার্থনা হোক, আমরা সবাই যেন আলোকিত পথে এগিয়ে যেতে পারি।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সোমবার সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে অন্য বছরের মতো এবারও ঢাকায় সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। এ বছর হল অভ্যন্তরে হল প্রশাসনের পূজাসহ ৭৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে। হল প্রশাসনের পূজা হলের উপাসনালয়ে এবং বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর পূজা হলের মাঠে স্থাপিত নিজস্ব মণ্ডপে হবে। মণ্ডপের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে প্রত্যেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের পূজা কমিটির উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে। অন্যবারের মতো এবারও হলের পুকুরে হবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পূজা। পূজার সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে।
পূজার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে লিখিত বক্তব্যে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দেবাশীষ পাল বলেন, শনিবার থেকে প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে এ বছরের শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিক পর্ব আরম্ভ হচ্ছে। তিনি বলেন, গত জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দু’দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবারের দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আগত পূণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।
তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় এবার রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে (সাবেক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যুব ঐক্য পরিষদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছেন, গত তিন বছর যাবৎ ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিদ্যা ও জ্ঞানার্জনের দেবী শ্রী শ্রী স্বরসতী দেবীর পূজার্চনা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এ বছর প্রেস ক্লাবের বর্তমান কমিটি পূজা আয়োজনের অনুমোদন প্রদান করেনি, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং প্রেস ক্লাবের অসাম্প্রদায়িক নীতিমালার পরিপন্থী। তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের বর্তমান কমিটির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবারও স্বরসতী পূজা আয়োজন করার জন্যে জোর দাবি জানান।