ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবিতে উপাচার্য, প্রক্টর ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল প্রভোস্টের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর ভিপিপ্রার্থী হওয়া জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল। একই সঙ্গে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনায় মব সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সবার যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং হলে বাতিল করা সিট পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জ্বালাময়ী জালালের পক্ষে তার আইনজীবী বেল্লাল হোসাইন (মুন্সী বেল্লাল) এ নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়েছে, আমার মক্কেল জালাল আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছাত্র এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী।
বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ কয়েকটি হলে অবৈধ ও অনৈতিকভাবে বহিরাগত ও শিক্ষাকাল অতিক্রান্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থীর মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাদের গত ৮ এপ্রিলের মধ্যে হল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও কেউ হল ত্যাগ করেননি। তাদেরই একজন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার স্নাতকত্তোর পরীক্ষা শেষ হলেও তিনি অবৈধ ও অনৈতিকভাবে আট মাস ধরে হলে অবস্থান করছেন।
নোটিশে বলা হয়, গত ২৬ আগস্ট দিনগত রাত ১২টার ১৫ মিনিটের দিকে জালাল তার কক্ষে প্রবেশ করলে রুমমেট রবিউল ইসলাম তাকে দেরিতে রুমে প্রবেশের কারণ জানতে চান। জালাল বলেন, আমি ডাকসু নির্বাচনে একজন ভিপিপ্রার্থী। আমার অনেক কাজ থাকতে পারে না? আমি উকিলের (আইনজীবীর) চেম্বারে গিয়েছিলাম।
নোটিশে জানানো হয়, উকিলের কাছে গিয়েছেন শুনে রবিউল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রবিউল ইসলাম তার বেড থেকে উঠে জালালকে পুরোনো টিউবলাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে জালাল ডান হাত দিয়ে তা প্রতিরোধ করলে জালাল ও রবিউল উভয়ই আহত হন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন
ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
হত্যাচেষ্টা মামলায় ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালাল কারাগারে
নোটিশে বলা হয়, পরবর্তীসময় রবিউল ইসলাম ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের এনে রুমের দরজার বাইরে মব সৃষ্টি করে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন। আমার মক্কেল বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আবাসিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এরপর মব সন্ত্রাসীরা জালালকে হত্যার উদ্দেশ্যে কক্ষের জানালা ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, এরপর ২৬ আগস্ট রাতেই জালালকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় শাহবাগ থানায় নেওয়ার সময় বিভিন্ন সংগঠনে লুকিয়ে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পথ অবরোধ করে পুলিশের হেফাজত থেকে কেড়ে নিয়ে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ওই রাতের অন্ধকারে পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে আমার মক্কেল জালাল আহমদকে ফাঁসানো হয়েছে। হলের প্রভোস্ট কোনো তদন্ত না করেই আমার মক্কেলকে হল থেকে বহিষ্কার করেন। মব সন্ত্রাসীরা তার শরীরে অনেক আঘাত করেছে। তাকে কোনো চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার মক্কেলের বিপক্ষে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের কারণে তিনি তিনবার জেলে গিয়েছিলন এবং তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। জেল-জুলুম, মামলা-হামলার মধ্যদিয়ে তার জীবন গেছে। সেই ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আইন-আদালত বিষয়ে সমন্বয়ক ছিলেন এবং এখনো আছেন। তাই তিনি পতিত স্বৈরশাসকদের টার্গেট ছিলেন।
এতে বলা হয়, অতএব নোটিশ দ্বারা আপনাদের প্রতি জোরালো অনুরোধ জানানো হচ্ছে যে- লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে মব সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিতপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। অযৌক্তিক ও অবৈধভাবে বাতিল করা জালাল আহমদের বৈধ একক সিট ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসহ কয়েকটি হলে অবৈধ ও অনৈতিকভাবে অবস্থানরত বহিরাগত ও শিক্ষাকাল অতিক্রান্ত শিক্ষার্থীদের বের করে দিতে হবে। অন্যথায় আমার মক্কেল দেশের প্রচলিত আইনের আলোকে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যার পূর্ণ দায়ভার নোটিশগ্রহীতাদের ওপর বর্তাবে।
এফএইচ/বিএ/জিকেএস