আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার প্রতিবাদ, মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য প্রত্যাহার ও ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আধিপত্যবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সমাবেশ শেষে মশাল মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে গিয়ে শেষ করেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আল-আমিন রহমানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জেএসডি) সভাপতি তৌফিক উজ জামান পীরাচা, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সহসভাপতি লামিয়া ইসলাম, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গতকাল আমরা দেখলাম ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুরা আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করেছে। আমরা অবিলম্বে এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে আমরা বলি, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করার দাবি জানাই। একইসঙ্গে ভারতকে আমরা বলি বাংলাদেশের কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি আপনাদের দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ এই দেশের নাগরিক, আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
বক্তারা আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থনে গত ১৫ বছর বাংলাদেশের জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত তার উপনিবেশে পরিণত করেছিল। হাসিনার পতনে তাই আজ ভারত দিশাহারা হয়ে পড়েছে। নানা রকম অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ভারত চায় বাংলাদেশের উপর তার ঔপনিবেশিক আধিপত্য পুনরায় কায়েম করতে। আমরা তাদের স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পিণ্ডির জিঞ্জির ছিন্ন করেছে, ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাড়িয়েছি, আমরা কারো গোলামী করব না। সুতরাং বাস্তবতা মেনে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধির সাথে কাজ করতে আপনারা নিজেদের প্রস্তুত করুন। ভারতের সাথে আমাদের কোনো ধর্মীয় বিরোধ নেই। ভারতের সাথে আমাদের দ্বন্দ্ব কোনো ধর্মীয় দ্বন্দ্ব নয়; পরস্পরের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। আপনারা অধীনতামূলক চুক্তি আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, সীমান্তে আমাদের নাগরিককে হত্যা করেছেন, আমাদের নদীর পানি অবৈধভাবে প্রত্যাহার করেছেন। আমরা এগুলা নিয়ে কথা বলবো। রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক যেমন হয় আমরা সেভাবেই আপনাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই, কিন্তু আমাদের যদি গোলাম বানাতে চান বাংলাদেশের জনগণ তা মানবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সৈকত আরিফ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের সমর্থন দিয়েছে, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশ করুন। সে সব চুক্তি বাংলাদেশের জনগণ পরখ করে দেখতে চায়। পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আলোচনা শুরু করুন, এযাবৎকালে সংগঠিত সব সীমান্ত হত্যার বিচারের উদ্যেগ গ্রহণ করুন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের সমর্থন করবে, বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করবে।
সমাবেশে অন্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হকসহ নেতারা।