সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মাত্র ১২ দিনের অভিযানে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পতন হয়েছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। তবে বিদ্রোহীদের অভিযানে তিনি রাশিয়ায় পালিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার এ অবস্থান নিয়ে নতুন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ায় তার আসার খবর অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।
সংবাদমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার আসাদের মস্কো পলায়নের খবর অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। বিদ্রোহীরা ক্ষমতা দখলের পর এটি অবাক করা মন্তব্য বলে জানিয়েছে তারা।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আসাদ ও তার পরিবার কোথায় আছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
এর আগে রোববার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এদিন রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস ও রিয়া নভস্তির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়া আসাদ ও তার পরিবারের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
ইসলামিস্ট নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীরা দামেস্কে ঢুকে পড়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে ক্রেমলিনের একটি সূত্র রোববার সংবাদ সংস্থাগুলোকে জানিয়েছিল।
ক্রেমলিন মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া যদি আসাদ ও তার পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় তাহলে তা হবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একক সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্র প্রধান ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এটি কেবল তারই সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের আলোচনা সূচিতে আসাদকে নিয়ে কোনো এজেন্ডা ছিল না। সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে পেসকভ বলেন, যা ঘটেছে তা সারা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে এবং এ ক্ষেত্রে আমরাও ব্যতিক্রম নই।
রাশিয়া এর আগে ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচসহ ক্ষমতাচ্যুত বেশ কিছু নেতাকেই আশ্রয় দিয়েছে। বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে বাশার আল আসাদের শাসনকাল শুরু হয়। প্রথমে তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী সময়ে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’-এর ঢেউ সিরিয়ায় এসে পৌঁছালে বাশারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। যদিও এতদিন ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে ক্ষমতায় ছিলেন বাশার, বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক অভিযানের মুখে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
রোববার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে বাশার পদত্যাগে সম্মত হন এবং দেশত্যাগ করেন। তবে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে তখন কিছু জানা যায়নি।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে রুশ কূটনীতিকরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।