মহাকাশে আরও তীব্র হচ্ছে সামরিক প্রতিযোগিতা

এক সময় আমেরিকান জেনারেলরা মহাকাশে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে সরাসরি কথা বলতেন না। তারা স্যাটেলাইট ধ্বংসের সম্ভাবনার বদলে মহাকাশে আধিপত্য এর মতো শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন তারা রাশিয়া বা চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ যুদ্ধে মহাকাশ থেকে এবং মহাকাশের দিকে ও মহাকাশ থেকে মহাকাশে অস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা খোলাখুলিভাবে বলছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে রক্ষার জন্য গোল্ডেন ডোম নামের একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চান। প্রকল্পটির বেশিরভাগই ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও ব্যালিস্টিক মিসাইল শনাক্ত–অনুসরণ–ধ্বংস করার পুরোনো প্রচেষ্টার পুনর্বিন্যাস। ২০২৬ সালে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হতে পারে। প্রশ্ন হলো—তিনি কি আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে আরও নতুন ইন্টারসেপ্টর তৈরির নির্দেশ দেবেন? তিনি কি মহাকাশে লেজার-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার দিকে এগোবেন? উভয় উদ্যোগই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ট্রাম্প ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমেরিকার স্পেস ফোর্সে ৪০ শতাংশ অর্থবৃদ্ধি চেয়েছেন—যা অন্য খাতে বড় কাটছাঁটের কারণ হতে পারে। স্পেসএক্স মালিক ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, তার স্টারশিপ রকেট

মহাকাশে আরও তীব্র হচ্ছে সামরিক প্রতিযোগিতা

এক সময় আমেরিকান জেনারেলরা মহাকাশে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে সরাসরি কথা বলতেন না। তারা স্যাটেলাইট ধ্বংসের সম্ভাবনার বদলে মহাকাশে আধিপত্য এর মতো শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন তারা রাশিয়া বা চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ যুদ্ধে মহাকাশ থেকে এবং মহাকাশের দিকে ও মহাকাশ থেকে মহাকাশে অস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা খোলাখুলিভাবে বলছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে রক্ষার জন্য গোল্ডেন ডোম নামের একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চান। প্রকল্পটির বেশিরভাগই ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও ব্যালিস্টিক মিসাইল শনাক্ত–অনুসরণ–ধ্বংস করার পুরোনো প্রচেষ্টার পুনর্বিন্যাস।

২০২৬ সালে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আরও স্পষ্ট হতে পারে। প্রশ্ন হলো—তিনি কি আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে আরও নতুন ইন্টারসেপ্টর তৈরির নির্দেশ দেবেন? তিনি কি মহাকাশে লেজার-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার দিকে এগোবেন?

উভয় উদ্যোগই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ট্রাম্প ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমেরিকার স্পেস ফোর্সে ৪০ শতাংশ অর্থবৃদ্ধি চেয়েছেন—যা অন্য খাতে বড় কাটছাঁটের কারণ হতে পারে।

স্পেসএক্স মালিক ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, তার স্টারশিপ রকেট ২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হবে। যদিও তা এখন অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। তবুও স্টারশিপ সফল হলে তার প্রভাব হবে বিশাল।

এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ স্টারশিপ বিপুল পরিমাণ মালামাল বহন করতে পারবে।

যুদ্ধের পরিস্থিতিতে যদি স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়, তাহলে স্টারশিপের নির্ভরযোগ্যতা আমেরিকাকে দ্রুত প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেবে। তবে মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্কের টানাপোড়েন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছিল যে রাশিয়া এমন একটি মহাকাশ-ভিত্তিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা নিম্ন-কক্ষপথে থাকা বহু স্যাটেলাইটকে একসঙ্গে ধ্বংস করতে পারে—যেমন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত লেজার ইন্টারসেপ্টরও এর শিকার হতে পারে।

এ ধরনের অস্ত্র ১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস চুক্তি লঙ্ঘন করে, ওই চুক্তির মাধ্যমে কক্ষপথে গণবিধ্বংসী অস্ত্র স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়।

বিশেষ সন্দেহের মধ্যে রয়েছে কসমস ২৫৫৩ নামের রুশ স্যাটেলাইট (ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ উৎক্ষেপণ করা হয়), যার ভেতরে পরীক্ষামূলক নকল ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজর রাখছে, রাশিয়া এই অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যায় কি না।

২০২৫ সালে ব্রিটেন প্রথমবারের মতো ঘোষণা করে, তারা কাউন্টার-স্পেস অস্ত্র তৈরি করবে—যার মধ্যে স্যাটেলাইট ধ্বংস বা বিঘ্ন ঘটানোর জন্য কাইনেটিক ও ইলেকট্রনিক উভয় ধরনের প্রযুক্তি থাকবে।

ফ্রান্স সম্প্রতি একটি রঁদেভু ও প্রোক্সিমিটি অপারেশন রিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে—যা সন্দেহভাজন একটি রুশ স্যাটেলাইটকে কেন্দ্র করে করা হয়। এমন কৌশল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে আক্রমণ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমেরিকা ও চীনও একে অপরের স্যাটেলাইটের কাছে ঘনিষ্ঠভাবে কক্ষপথে ঘোরাঘুরি করেছে। ভবিষ্যতে এই অরবিটাল ছায়াযুদ্ধ আরও বাড়বে।

মহাকাশ পর্যবেক্ষণ সাধারণত ব্যয়সাপেক্ষ—শক্তিশালী রাডারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এখন বেসরকারি কোম্পানিরাই স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

ম্যাক্সার—আগে পৃথিবীর ছবি তুললেও এখন তারা মহাকাশে থাকা অন্যান্য স্যাটেলাইটের ছবি তুলছে, যেগুলো আগে শুধু গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেই দেখা যেত।

স্লিংশট অ্যারোস্পেস—১৫০টি টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে স্যাটেলাইট নজরদারি করে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে যখন কসমস ২৫৫৩ হঠাৎ ঘূর্ণায়মান হয়ে কক্ষপথ থেকে সরে গিয়েছিল। তখন স্লিংশটের সেন্সরই সেটি ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়।

মহাকাশে সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতি বছরই তীব্র হচ্ছে—তবে অন্তত এটাও সত্য, প্রযুক্তির উন্নতির কারণে বিষয়টি আগের তুলনায় আরও স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow