মহারাজার আমলে নির্মিত ঢোপকল এখন কালের সাক্ষী

আজ থেকে ৮৫ বছর আগের কথা। ১৯৪০ সালে দিনাজপুরের তৎকালীর মহারাজা গিরিজানাথ রায় বাহাদুর জনগণের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য ঢোপকল নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দিনাজপুর শহরে একে একে ২৫টি ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। সেসব ঢোপকল এখন শুধুই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে ঢোপকলগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় সুপেয় পানির জোগান দেওয়া ঢোপকলগুলো জরাজীর্ণ ও ময়লার ফেলার স্থানে পরিণত হয়। সম্প্রতি কয়েকটি ঢোপকলে নতুন রূপ দিয়েছেন দিনাজপুরের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। সংস্কার করে ঢোপকলগুলোতে রঙ-তুলির আঁচড় দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানিও পান করতে পারছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে দিনাজপুর শহরের বুটিবাবুর মোড়, ডাবগাছ মসজিদ মোড়, লালবাগ বৈশাখির মোড়, কালিতলা থানা মোড় রয়েছে ঢোপকল। সম্প্রতি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‌‘বিউটিফুল দিনাজপুর’ গ্রুপের সদস্যরা ঢোপকলগুলো সংস্কার ও নতুনভাবে রং করে ব্যবহার উপযোগী করেন। নতুনভাবে সচল হওয়া ঢোপকলগুলো থেকে সুপেয় পানি পান করছে সাধারণ মানুষ। দিনাজপুর শহরের লালবাগ বৈশাখীর মোড় এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আজগার আলী ও আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজাদের আমলে আমাদের এলাকায় একটি ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। এগুলো বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়

মহারাজার আমলে নির্মিত ঢোপকল এখন কালের সাক্ষী

আজ থেকে ৮৫ বছর আগের কথা। ১৯৪০ সালে দিনাজপুরের তৎকালীর মহারাজা গিরিজানাথ রায় বাহাদুর জনগণের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য ঢোপকল নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দিনাজপুর শহরে একে একে ২৫টি ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। সেসব ঢোপকল এখন শুধুই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে ঢোপকলগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।

একসময় সুপেয় পানির জোগান দেওয়া ঢোপকলগুলো জরাজীর্ণ ও ময়লার ফেলার স্থানে পরিণত হয়। সম্প্রতি কয়েকটি ঢোপকলে নতুন রূপ দিয়েছেন দিনাজপুরের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। সংস্কার করে ঢোপকলগুলোতে রঙ-তুলির আঁচড় দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানিও পান করতে পারছে সাধারণ মানুষ।

বর্তমানে দিনাজপুর শহরের বুটিবাবুর মোড়, ডাবগাছ মসজিদ মোড়, লালবাগ বৈশাখির মোড়, কালিতলা থানা মোড় রয়েছে ঢোপকল। সম্প্রতি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‌‘বিউটিফুল দিনাজপুর’ গ্রুপের সদস্যরা ঢোপকলগুলো সংস্কার ও নতুনভাবে রং করে ব্যবহার উপযোগী করেন। নতুনভাবে সচল হওয়া ঢোপকলগুলো থেকে সুপেয় পানি পান করছে সাধারণ মানুষ।

দিনাজপুর শহরের লালবাগ বৈশাখীর মোড় এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আজগার আলী ও আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজাদের আমলে আমাদের এলাকায় একটি ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। এগুলো বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ঢোপকলগুলো আর ব্যবহার করা হচ্ছিল না। এগুলো থেকে পানিও বের হতো না। কিন্তু কয়েকজন ছেলে ঢোপকলগুলো নতুন করে রং করেছে। ঢোপকল চালু করেছে। মনে হচ্ছে রাজার আমলে দেখছি।’

মহারাজার আমলে নির্মিত ঢোপকল এখন কালের সাক্ষী

৬৫ বছর বয়সী ইজিবাইক চালক নির্মল রায় বলেন, ‘আমি এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালাই। আগে আমি প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতাম। রিকশা চালানোর সময় পানির তৃষ্ণা পেলে ঢোপকলের টেপে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতাম। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ঢোপকল ছিল। কিন্তু এখন সেই ঢোপকলগুলো আরও নজরে পড়ে না। হাতে গোনা কয়েকটি ঢোপকল শহরে আছে।’

কথা হয় বুটিবাবুর মোড়ের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢোপকলগুলো শহরের ইতহাস-ঐতিহ্যর স্বাক্ষর বহন করছে। নতুন করে ঢোপকলগুলোর ব্যবহার শুরু হওয়ায় এগুলো হয়তো আরও কিছু বছর টিকে থাকবে।’

বিউটিফুল দিনাজপুর গ্রুপের সদস্য ফিরোজ মাহফুজ বলেন, ‘মহারাজার আমলে নির্মিত ঢোপকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে ছিল। দেখতে খুব খারাপ লাগছিল। তাই আমরা বিউটিফুল দিনাজপুর গ্রুপের সদস্যরা মিলে ঢোপকলগুলো পরিষ্কার করে নতুন করে রং করে দিয়েছি। এটা করে আমাদের খুব ভালো লাগছে।’

গ্রুপের অ্যাডমিন মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘মহারাজার আমলে ২৫টির মতো ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হাতেগোনা ৪-৫টি ঢোপকল রয়েছে। সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী ছিল না। বিষয়টি দেখার পর আমরা গ্রুপের সদস্যরা মিলে ঢোপকলগুলো ঘষামাজা করে ভেতরে পরিষ্কার এবং বাইরে নতুন করে রং করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আগে ঢোপকলগুলোর কাছে কেউ যেতেন না। এখন নতুনের মতো হওয়ায় সাধারণ মানুষ এগুলে থেকে পানি পান করছে।’

দিনাজপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঢোপকলগুলোতে দিনাজপুর পৌরসভার পানির লাইন সংযোগ রয়েছে। মানুষ এই পানি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে যারা শহরে ভোরে কৃষিপণ্য, বিভিন্ন প্রকার সবজি নিয়ে আসেন, তারা এই সুপেয় পানি পান করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করেন।’

এসআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow