‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’

1 month ago 21

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর দুর্গম চরে একটি মানববন্ধন ও সমাবেশে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম আহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় পরিষদ চত্বরে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’

মানববন্ধনকারীদের ভাষ্য, পদ্মা নদীর কারণে জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন চর সাদিপুর ইউনিয়ন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার মানুষের জীবনমান অনুন্নত হলেও শান্তিতে বসবাস করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে ষড়যন্ত্র করে চর সাদিপুরকে পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে চাই। সেজন্য বুধবার বেলা ১১টায় পাবনা প্রশাসনের একটি দল চরসাদিপুর পরিদর্শনে আসার কথা ছিল।

প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে এলাকাবাসী। সকাল ১০টার দিকে পাবনার দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মানববন্ধনে হামলা করে এবং সমাবেশস্থলের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। পরে দুপুর ১২টার দিকে ‌‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’ স্লোগানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানান্তর নয়, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আহত বিএনপি নেতা গোলাম আজম বলেন, ‘আজ স্থানান্তরের বিষয়ে পাবনা প্রশাসনের পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করি। হঠাৎ পাবনার একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।’

‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’

বিএনপি নেতার ভাষ্য, স্থানান্তরের আগেই পাবনার সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। স্থানান্তরের পরে তারা নানাভাবে হয়রানি করবে, তা সহজেই অনুমেয়।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে (উত্তর) প্রায় ২৫ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৯৯৮ সালে গঠিত চরসাদীপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৯টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমটার এবং জেলা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে। যার উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালের আগ পর্যন্ত এটি পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

জানা গেছে, প্রায় ছয় কিলোমিটার পদ্মা নদীর বুকের ওপর দিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন চর সাদিপুরের বাসিন্দারা। ভরা বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে চর জাগে। তখন পানিতে নৌকা ও চরে ইজিবাইক, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল এবং পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন তারা। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও সময় অপচয়ের সঙ্গে পাল্লা দেয় চরম ভোগান্তি। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’

বেলা সোয়া ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরে উত্তেজিত হাজারও জনতা। পরিষদ ভবনের সামনে সমাবেশস্থলে পড়ে আছে অগোছালো চেয়ার। তাতে ভাঙচুরের ক্ষত। পাবনার কিছু বিএনপির নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। চেয়ারম্যান কক্ষের বাইরে স্থানীয় দুটি পক্ষ হাতাহাতি করছে। পরে দুপুর ১২টার দিকে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় কৃষক হামিদ সরদার (৭৫) বলেন, ‘পদ্মা নদীর কারণে আমাদের কপাল পুড়েছে। তবুও আমার বাপ-দাদারা বাস করেছে কুমারখালীর নামে। আমরাও বাস করতে চাই। আমাদের চলাচলের ভোগান্তি হলেও শান্তিতে আছি।’

তবে এঘটনায় জড়িত পাবনা এলাকার মানুষের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তারা কেউ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

‘মা-মাটি-মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’

চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খা বলেন, ‘হট্টগোল হয়েছে পরিষদ চত্বরে। পাবনার প্রশাসন আজ আর আসবে না। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদ্মা নদীর কারণে চরসাদিপুর একটি ‘দুর্গম এলাকা’ বলে মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।

তিনি বলেন, সাদিপুরকে পাবনার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় কি-না, সে বিষয়ে পাবনার প্রশাসন পরিদর্শনে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের হট্টগোলের কারণে তারা আসেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article