মাহফিল বা সমাবেশে লোক জড়ো করার জন্য বা মাইক পরীক্ষার জন্য কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা আদবের পরিপন্থি কাজ। মানুষ মনোযোগ দিয়ে শোনার মতো অবস্থায় থাকে না এমন কোনো জায়গায় বা অবস্থায়ই কোরআন তিলাওয়াত করা বা কোরআন তিলাওয়াতের রেকর্ড বাজানো সমীচীন নয়।
কোরআন তিলাওয়াত করতে হয় মনোযোগ দিয়ে আদবের সাথে, কোথাও কোরআন তিলাওয়াত হলে তাও চুপ থেকে আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন কোরআন পড়া হয়, তখন চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে শোনো, হয়তো তোমাদের দয়া করা হবে। (সুরা আরাফ: ২০৪)
কোরআন তিলাওয়াত শুরু হলে তা যদি মনোযোগ দিয়ে না শোনা হয়, মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কোরআনের অসম্মান হয়। আল্লাহর কালামের সাথে বেয়াদবি হয়।
কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ। সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার মর্যাদা যেমন, পৃথিবীর সব কথা, বক্তব্য ও গ্রন্থের ওপর কোরআনের মর্যাদাও তেমন। আল্লাহ তাআলা কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, পূত-পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়তানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না, তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাজিলকৃত। (সুরা ওয়াকিয়া: ৭৭-৮০)
তাই মুমিনমাত্রই কোরআনের মহত্ত্ব ও সম্মান অন্তরে থাকা উচিত এবং কোনোভাবে যেন আল্লাহর কালাম কোরআনের অসম্মান না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত করা কি বিদআত?
কোনো কল্যাণকর ও জায়েজ অনুষ্ঠান, দ্বীনি মাহফিল কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েজ ও বরকতপূর্ণ কাজ। সাহাবায়ে কেরাম অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত করতে বলে বর্ণিত রয়েছে।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিরা যখন কোনো বৈঠকে বসতেন, তখন অন্যান্য কথাবার্তা শুরু করার আগে তাদের কেউ কোনো সুরা তিলাওয়াত করতেন বা কাউকে নির্দেশ দেওয়া হতো কোরআনের কোনো সুরা পাঠ করার জন্য। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৩২২)
খতিব বাগদাদি (রহ.) তার লিখিত ‘আল-জামে লিআখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামে’ গ্রন্থে হাদিসের মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদিসের মজলিসের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ থেকে বর্ণিত আবু নাজরা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিরা কোনো মজলিসে একত্রিত হলে ফিকহের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন এবং কোরআনের কোনো সুরা তিলাওয়াত তরতেন। (আল-জামে লিআখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪)
তাই কোনো জায়েজ অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে; এটাকে ভুল বা বিদআত বলার সুযোগ নেই।
ওএফএফ/এমএস