আমাদের শরীরের প্রতিটি অংশেই নানা ধরনের আনুবীক্ষণিক জীব বা জীবাণু বাস করে। এদের মধ্যে তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাসিন্দারা থাকে আমাদের পেটে — যাদের মিলে গঠিত হয় মাইক্রোবায়োম।
মাইক্রোবায়োম হলো পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রজীবীর জটিল এক নেটওয়ার্ক। যদিও ‘ব্যাকটেরিয়া’ শুনলেই অনেকেই ভয় পান, বাস্তবে এই ক্ষুদ্রজীবীরা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও দেহের কাজকর্মে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
পেটের মাইক্রোবায়োম শুধুমাত্র হজমে সাহায্য করে না; এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, মানসিক স্বাস্থ্যের রাখে, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইক্রোবায়োমে বৈচিত্র্য বেশি থাকলে প্রদাহ, হজমজনিত অসুবিধা এবং আরও অনেক সমস্যার ঝুঁকি কমে। তাহলে এই মাইক্রোবায়োমের সুস্থতার জন্য কী করবেন? জেনে নিন-
১. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
শস্য, সবজি, ডাল ও ফল আমাদের মাইক্রোবায়োমের প্রিয় খাবার। এগুলো হজমে সাহায্য করে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়াকে বাড়ায়।
২. প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার
টকদই, ছানা ও অন্যান্য ফার্মেন্টেড খাবারে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো নিয়মিত খেলে পেটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে।
৩. অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো
যত বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি, তত বেশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। পেটের ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, পেটের ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্যও বাড়ায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম পেটের জন্য ভালো।
৫. মানসিক চাপ কমানো
চিন্তা, উদ্বেগ ও স্ট্রেস পেটে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পেটের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া মানে শুধু হজম ঠিক রাখা নয়। এটি মানসিক সুস্থতা, শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পথ। তাই প্রতিদিনের খাদ্য, জীবনধারা এবং মানসিক যত্নের মাধ্যমে পেটের মাইক্রোবায়োমকে সুস্থ রাখুন।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং, মায়ো ক্লিনিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ, পাবমেড সেন্ট্রাল, এমডিপিআই
এএমপি/এমএস