মাটি নড়ে, যন্ত্র বলে : ভূমিকম্প!
সিসমোগ্রাফ হলো আধুনিক বিজ্ঞানের এমন এক উদ্ভাবন যা ভূমিকম্পের কম্পন বা ভূকম্পন তরঙ্গ রেকর্ড করে থাকে। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে পৃথিবীর কম্পনকে ধরে রাখে এবং তাকে গ্রাফ বা তরঙ্গরূপে প্রকাশ করে। ভূমিকম্পের সময়কাল,তীব্রতা ও উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র। সিসমোগ্রাফ উদ্ভাবন ইতিহাস: ঝ্যাং হ্যাং নামে পরিচিত চীনের হান রাজবংশে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রথম সিসমোগ্রাফের ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি ১৩২ খ্রিস্টাব্দে “সিসমোস্কোপ” নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন এ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যা ভূমিকম্পের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারত। তার তৈরি যন্ত্রটি ছিল প্রায় ২ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি বড় ব্রোঞ্জের পাত্র। এ পাত্রের চারপাশে আটটি ব্রোঞ্জের ড্রাগনের মাথা লাগানো ছিল। আটটি ড্রাগনের মুখের প্রত্যেকটিতে একটি ব্রোঞ্জ বল থাকত। আর এর নিচে ছিল সমসংখ্যক ব্যাঙ। যখন ভূমিকম্প হত তখন ড্রাগনের একটি মুখ খুলে যেত এবং বলটি নিচে থাকা একটি ব্যাঙের মুখে পড়ত। এ বল পড়ার শব্দ থেকে বুঝা যেত কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে। অর্থাৎ এ যন্ত্র দিয়ে ভূমিকম্পের দিক নির্ণয় করা যেত কিন্তু কম্পনের মাত্রা নির্ণয় করা যেত ন
সিসমোগ্রাফ হলো আধুনিক বিজ্ঞানের এমন এক উদ্ভাবন যা ভূমিকম্পের কম্পন বা ভূকম্পন তরঙ্গ রেকর্ড করে থাকে। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে পৃথিবীর কম্পনকে ধরে রাখে এবং তাকে গ্রাফ বা তরঙ্গরূপে প্রকাশ করে। ভূমিকম্পের সময়কাল,তীব্রতা ও উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র।
সিসমোগ্রাফ উদ্ভাবন ইতিহাস:
ঝ্যাং হ্যাং নামে পরিচিত চীনের হান রাজবংশে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রথম সিসমোগ্রাফের ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি ১৩২ খ্রিস্টাব্দে “সিসমোস্কোপ” নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন এ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যা ভূমিকম্পের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারত। তার তৈরি যন্ত্রটি ছিল প্রায় ২ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি বড় ব্রোঞ্জের পাত্র। এ পাত্রের চারপাশে আটটি ব্রোঞ্জের ড্রাগনের মাথা লাগানো ছিল।
আটটি ড্রাগনের মুখের প্রত্যেকটিতে একটি ব্রোঞ্জ বল থাকত। আর এর নিচে ছিল সমসংখ্যক ব্যাঙ। যখন ভূমিকম্প হত তখন ড্রাগনের একটি মুখ খুলে যেত এবং বলটি নিচে থাকা একটি ব্যাঙের মুখে পড়ত। এ বল পড়ার শব্দ থেকে বুঝা যেত কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে। অর্থাৎ এ যন্ত্র দিয়ে ভূমিকম্পের দিক নির্ণয় করা যেত কিন্তু কম্পনের মাত্রা নির্ণয় করা যেত না।
আধুনিক সিসমোগ্রাফ:
১৮৫৫ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী লুইগি পালমিয়েরি পারদ ভর্তি U-আকৃতির নল ব্যবহার একটি সিসমোগ্রাফ তৈরি করেন যা কম্পন হলে পারদ নড়ে একটি বৈদ্যুতিক সংযোগ ঘটাত এবং রেকর্ডিং ড্রাম চালু করত।
প্রথম সত্যিকারের সিসমোগ্রাফ তৈরি করেন ইতালীয় পদার্থবিদ ফিলিপো সেচ্চি। ১৮৭৫ সালে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি কম্পনের সময় পেন্ডুলামের গতিবিধি রেকর্ড করতে পারত।
তবে, আধুনিক রেকর্ডিং সিসমোগ্রাফের জনক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত স্কটিশ বিজ্ঞানী জন মিলনে। ১৮৮০-এর দশকে সহকর্মী জেমস ইউইং ও থমাস গ্রে কর্তৃক আবিষ্কৃত যন্ত্রই পরে বিশ্বের আধুনিক সিসমোগ্রাফ প্রযুক্তির ভিত্তি হয়ে ওঠে।
আধুনিক সিসমোগ্রাফের উন্নয়নে বেশ অবদান রেখেছেন বোরিস গলিৎসিন নামের আরেক বিজ্ঞানী। তিনি ১৯০৬ সালে ইলেকট্রিক সিসমোগ্রাফ তৈরি করেন।
রিখটার স্কেল কী?
রিখটার স্কেল হলো ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করার একটি লগারিদমিক স্কেল। এটি ভূমিকম্পে উৎপন্ন ভূকম্পীয় তরঙ্গের শক্তি বা কম্পনের পরিমাণ নির্দেশ করে। মূলত ভূমিকম্প কত শক্তিশালী ছিল তা সংখ্যায় প্রকাশ করার পদ্ধতিই হচ্ছে রিখটার স্কেল।
এ স্কেলে, ৩.০ মাত্রা → ছোট ভূমিকম্প নির্দেশ করে।
এছাড়া ৫.০ মাত্রা → মাঝারি এবং ৭.০+ মাত্রা → প্রবল ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প নির্দেশ করে
স্কেলটির নাম রিখটার স্কেল হলেও ১৯৩৫ সালে এ যন্ত্র উদ্ভাবনের সঙ্গে চার্লস ফ্রান্সিস রিখটার এবং বেনো গুটেনবার্গ, দুজন বিজ্ঞানী সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা উভয়েই ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভূমিকম্প বিজ্ঞানী ছিলেন।
সিসমোগ্রাফ কীভাবে কাজ করে?
সিসমোগ্রাফে সাধারণত দু’টি প্রধান অংশ থাকে। এগুলো হচ্ছে স্থির ফ্রেম ও ঝুলন্ত ভর। স্থির ফ্রেমটি মাটির সাথে শক্তভাবে যুক্ত থাকে কিন্তু ভরটি স্প্রিং বা তারের মাধ্যমে ঝুলে থাকে। ভূমিকম্পের সময় মাটি নড়ে, ফলে যন্ত্রের স্থির ফ্রেম নড়ে ওঠে। কিন্তু ঝুলন্ত ভর তার জড়তার কারণে স্থির থাকে বা তুলনামূলক কম নড়তে থাকে। এতে স্থির ফ্রেম ও ঝুলন্ত ভরের মধ্যে আপেক্ষিক নড়াচড়া করার এই পার্থক্যই ভূমিকম্পের কম্পনের পরিমাপ দেয়।
এই আপেক্ষিক নড়াচড়া রেকর্ড করার দুটি সাধারণ পদ্ধতি আছে।
ক) যান্ত্রিক সিসমোগ্রাফ (পুরনো)
ঝুলন্ত ভরের সঙ্গে একটি কলম লাগানো থাকে। কলমটি একটি ঘূর্ণায়মান কাগজের ওপর দাগ তোলে। ভূকম্পন যত বেশি, দাগ তত বেশি ওঠানামা করে।
খ) আধুনিক ডিজিটাল সিসমোগ্রাফ
ভরের নড়াচড়া সেন্সর দিয়ে মাপা হয় (যেমন : ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর)। এই সংকেত ডিজিটাল ডেটায় রূপান্তরিত হয়। কম্পিউটার সেগুলো বিশ্লেষণ করে সিসমোগ্রাম তৈরি করে।
সিসমোগ্রাফ কী ধরনের তরঙ্গ ধরে?
এটি ভূমিকম্পের তিন ধরনের প্রধান তরঙ্গ ধরতে পারে। এগুলো হচ্ছে-
(১)পি-ওয়েভ, (প্রাইমারি ওয়েভ সব সিসমিক তরঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত) অর্থাৎ ভূমিকম্পে সবচেয়ে আগে আসে। কঠিন,তরল এবং বায়ু তিন মাধ্যমেই চলতে পারে।
(২)এস-ওয়েভ, (সেকেন্ডারি ওয়েভ পি ওয়েভের চেয়ে কম দ্রুত এবং এটি আড়াআড়ি তরঙ্গ)। এটি চলার পথে মাটিকে ওপর-নিচ বা ডান-বামে নাড়িয়ে সামনে এগোয়—যেমন দড়ি ঝাঁকালে যেমন তরঙ্গ তৈরি হয়। এ তরঙ্গ তরল মাধ্যমে চলতে পারে না কেবল সলিড মাধ্যমে চলতে পারে।
(৩) সারফেস ওয়েভ- এটি হচ্ছে ভূমিকম্পের সময় পৃথিবীর পৃষ্ঠের বরাবর চলা কম্পন তরঙ্গ। এগুলো সবচেয়ে ধীরগতির হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ভূত্বকের উপরের স্তর ধরে অনুভূমিক বা উল্লম্বভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সিসমোগ্রাফ থেকে কীভাবে ভূমিকম্পের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়?
একটি সিসমোগ্রাফ একাই কেন্দ্র নির্ধারণ করতে পারে না। মাটিতে স্থাপিত কমপক্ষে তিনটি সিসমোগ্রাফের ডেটা মিলিয়ে তরঙ্গ আসার সময়ের পার্থক্য বিশ্লেষণ করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল (এপিসেন্টার) নির্ণয় করা হয়।
সূত্র : বিবিসি, নিউ সায়েন্টিস্ট, ব্রিটানিকা
কেএম
What's Your Reaction?