মানহীন ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের সরবরাহ বন্ধ চায় এফবিসিসিআই

3 months ago 56

আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প-কারখানার অগ্নি নিরপত্তা নিশ্চিতে বাজারে মানহীন ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের সরবরাহ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ চায় দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এ খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (২ জুন) মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সভা করে ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, ডিজাস্টার অ্যান্ড এক্সপ্লোশন বিষয়ক এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটি। সভায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের দিক-নির্দেশনা দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি। সভাপতিত্ব করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং ইলেকট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) সহ-সভাপতি মতিন খান। কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআই পরিচালক এবং ইসাবের সভাপতি মো. নিয়াজ আলী চিশতি।

সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ফায়ার সেফটি এবং সিকিউরিটি এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জান-মাল এবং সম্পদের সুরক্ষায় ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কাজেই যে কোনো ভবন বা কারখানা নির্মাণের সময় অগ্নি নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। তবে মানহীন ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম আমাদের এই বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছে। কারা এসব মানহীন পণ্য বাজারে আনছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য ইসাবসহ এই খাতের সব অংশীজনকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার।

অগ্নি নিরাপত্তাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, আমরা বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা খরচ করি। সেখানে দামি টাইলস, মার্বেল পাথর কিংবা নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করি। অথচ অগ্নি নিরাপত্তার জন্য কোনো খরচ করি না। সম্পদ ও জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে ফায়ার সেফটি এবং সিকিউরিটির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ফায়ার সেফটির প্রয়োজনীয়তা, যন্ত্রপাতির বাজার ও চাহিদা, আমদানি নির্ভরতা, স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতি বিষয় সংযুক্ত করে একটি সমৃদ্ধ ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে ইসাবসহ ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট শিল্পের অংশীজনদের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নকল ও মানহীন সরঞ্জাম বাজারজাতকারীদের তথ্য স্ট্যান্ডিং কমিটিকে সরবরাহের আহ্বান জানান কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মো. নিয়াজ আলী চিশতি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইসাবের উদ্যোগে এরই মধ্যে বিএসটিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এফবিসিসিআই এবং বিএসটিআইয়ের সহযোগিতা নিয়ে ইসাব এবং সহযোগী সংগঠনগুলো নকল পণ্য রোধে আরও কঠোর হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বিএসটিআই, এনবিআরসহ সব অংশীজনকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার আয়োজনের কথাও জানান তিনি।

কমিটির চেয়ারম্যান মতিন খান জানান, অগ্নি নিরাপত্তা এবং কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। তবে অন্যান্য শিল্প এদিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ প্রদান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা নকল ও মানহীন যন্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করার আহ্বান জানান। এছাড়া মানহীন পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সঠিক ফায়ার কোড বা স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ, ফায়ার সেফটি যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানির ব্যয় হ্রাস, ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টেরিওর (সাজসজ্জা) নিরুৎসাহিত করা, ফায়ার সেফটি শিল্প এবং এই খাতের ট্রেডিং হাউজের জন্য অভিন্ন কাস্টমস ডিউটি নির্ধারণ, ফায়ার সেফটি কনসালটেন্সি সার্ভিসের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়া, পাঠ্যক্রমে অগ্নি নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়কে আরও গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন কমিটির সদস্যরা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব, মো. আবুল হাশেম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার, এফবিসিসিআই সেফটি কাউন্সিলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবু নাইম মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জোন কমান্ডার ফয়সালুর রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।

ইএআর/কেএসআর

Read Entire Article