মানিকগঞ্জ জেলায় আমন ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। বর্ষা মৌসুমে পানি না আসায় আমনের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার আমন ধানে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন ধান চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় দুই জাতের আমন ধান চাষ করা হয়—রোপা আমন ও বোনা আমন। সাতটি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৮৯৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। বোনা আমন আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৩৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৪৫ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন। বোনা আমন আবাদ হয়েছিল ১৯ হাজার ৬৯১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বোনা আমন আবাদ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন। রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে ১৩ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন
দিনে শতাধিক লিটার দুধ পান ২২ গরুর মালিক
শিবপুরে আখ চাষে দ্বিগুণ লাভ, কৃষকের মুখে হাসি
নালী ইউনিয়নের চাষি রতন দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছিল। এ বছর ভরা বর্ষায়ও জমিতে পানি নেই। যদি চকে (মাঠে) পানি না আসে, তাহলে ফলন ভালো হবে না। ধান গাছের নিচে যদি পানি না থাকে, তাহলে খরা বা রোদে ধান গাছের পাতা হলুদ হয়ে গাছ মরে যাবে। ধানের শীষ যখন বের হয়; তখন গাছের অনেক রস দরকার হয়। তখন যদি গাছের গোড়ায় পানি না থাকে, তাহলে ধানের শীষ পূর্ণভাবে বের হবে না। কাজেই আমন ধানের জন্য পানি খুব প্রয়োজন।’
নবগ্রামের কৃষক মিলন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমন ধানের ভালো ফলন তখনই হবে; যখন ধান গাছের নিচে পানি থাকবে। আমন ধান গাছের স্বভাব হচ্ছে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ধান গাছেরও বৃদ্ধি হবে। ধান গাছ পানির ওপর দিয়ে ভেসে উঠবে। কিন্তু এ বছর তো ভরা বর্ষায়ও পানি আসে নাই। এখন একভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমন ধানের সবুজ পাতা দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির পর একটানা কয়েক দিন খরা হলে ধান গাছগুলো মারা যাবে।’
উভাজানী গ্রামের কৃষক মজলিস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর আল্লায় দিলে ভালোই আমন ধান পেয়েছিলাম। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছি। বর্ষা মৌসুমে পানি আসে নাই। আমন ধানের কী হবে সেই বিষয়ে আমরা খুব চিন্তিত।’
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজাহান সিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো আমন ধান কুশি পর্যায়ে আছে। কৃষক যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে, তা হলো ধানের শীষ বের হওয়ার সময় বৃষ্টি হবে না। যদি তখন বৃষ্টি না হয়, তাহলে আমরা আমন ধানের জন্য সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করবো। ফলন ভালো হবে আশা করি।’
এসইউ/এমএস