মানিকগঞ্জে নকল নাম্বার প্লেট দিয়ে মাসিক চাঁদা তোলেন টিআই

মানিকগঞ্জে ইঞ্জিনচালিত রিকশা থেকে নকল নম্বর প্লেট সরবরাহ করে মাসিক চাঁদা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে জেলা ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জাসেল (৪০)-এর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় নকল প্লেট দিয়ে অবৈধ অর্থ আদায়ের আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি ভুক্তভোগী চালক ও মালিকরা মুখ খুললে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। অভিযোগকারীরা জানান, বৈধ কাগজপত্র না থাকা ইঞ্জিনচালিত রিকশার চালকদের কাছে ট্রাফিক পুলিশের 'এজেন্ট' নকল নম্বর প্লেট সরবরাহ করত। এসব প্লেটের বিনিময়ে মাসে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। প্লেটগুলো কোনোটিই সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত না হলেও এগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য করা হতো। অন্যদিকে প্লেটবিহীন রিকশাগুলোকে এক মাসে তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত ধরে জরিমানা ও ডাম্পিং করা হতো। প্লেট না থাকলে রিকশা ধরা পড়লেই গুনতে হতো ২ হাজার টাকা জরিমানা; পাশাপাশি তিন দিন ডাম্পিংয়ে আটকে থাকত যানটি। এতে তিন দিনের আয় বন্ধ হওয়ায় একজন নিম্ন আয়ের চালকের প্রায় ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হতো। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে নকল প্লেটের ‘মাসিক চুক্তিতে’ যোগ দিতেন। অভিযোগকারীদের দাবি, সরকারি জরিমানা ব্যাংক

মানিকগঞ্জে নকল নাম্বার প্লেট দিয়ে মাসিক চাঁদা তোলেন টিআই

মানিকগঞ্জে ইঞ্জিনচালিত রিকশা থেকে নকল নম্বর প্লেট সরবরাহ করে মাসিক চাঁদা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে জেলা ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জাসেল (৪০)-এর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় নকল প্লেট দিয়ে অবৈধ অর্থ আদায়ের আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি ভুক্তভোগী চালক ও মালিকরা মুখ খুললে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

অভিযোগকারীরা জানান, বৈধ কাগজপত্র না থাকা ইঞ্জিনচালিত রিকশার চালকদের কাছে ট্রাফিক পুলিশের 'এজেন্ট' নকল নম্বর প্লেট সরবরাহ করত। এসব প্লেটের বিনিময়ে মাসে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো।

প্লেটগুলো কোনোটিই সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত না হলেও এগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য করা হতো। অন্যদিকে প্লেটবিহীন রিকশাগুলোকে এক মাসে তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত ধরে জরিমানা ও ডাম্পিং করা হতো।

প্লেট না থাকলে রিকশা ধরা পড়লেই গুনতে হতো ২ হাজার টাকা জরিমানা; পাশাপাশি তিন দিন ডাম্পিংয়ে আটকে থাকত যানটি। এতে তিন দিনের আয় বন্ধ হওয়ায় একজন নিম্ন আয়ের চালকের প্রায় ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হতো। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে নকল প্লেটের ‘মাসিক চুক্তিতে’ যোগ দিতেন।

অভিযোগকারীদের দাবি, সরকারি জরিমানা ব্যাংক স্লিপের মাধ্যমে জমা হলেও নকল প্লেটের টাকা সরাসরি হাতিয়ে নিতেন টিআই জাসেল। তার নামে এবং নকল প্লেটের মাধ্যমে অন্তত শ'খানেক রিক্সার দায়িত্বে তিনি আছেন এবং মাসিক হারে চাঁদা তোলেন।

রিকশাচালক রবিন মিয়া (২২) জানান, তার রিকশায় লাগানো নম্বর প্লেটের সিরিয়াল নম্বর ১১৯। প্লেটটি তিনি মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকায় পেয়েছেন পুতুল মিয়ার কাছ থেকে। পুতুল মিয়াও সাংবাদিকদের বলেন, এই নম্বর প্লেটটি আমাকে দিয়েছেন টিআই জাসেল। তবে কোনো ব্লু বুক দেননি। প্রতি মাসে আমিই তাকে টাকা দিই।

চালকরা মাসিক টাকা পরিশোধ করলেই নির্বিঘ্নে শহরে রিকশা চালাতে পারতেন। এর ফলে বৈধ রিকশার পাশাপাশি দ্বিগুণ সংখ্যক অবৈধ রিকশা রাস্তায় চলাচল করছে। ফলে ছোট্ট শহর মানিকগঞ্জে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট ও বিশৃঙ্খলা।

ট্রাফিক বিভাগের এক ইন্সপেক্টর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, জাসেল কিছু অনিয়মে জড়িয়েছিলেন এটি সত্য। তাকে বিভিন্ন সময় সতর্ক করা হয়েছে। একজনের কারণে পুরো বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে টিআই জাসেলের সঙ্গে কথা বললে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি ‘সমঝোতার’ চেষ্টা করেন।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মো. আব্দুল হামিদ খান বলেন, আমি যোগদানের পর শুনেছি তার (জাসেল) কয়েকটি রিকশা ছিল। তখন সেগুলো বিক্রি করতে বলেছিলাম। যতদূর জানি, এখন তার কোনো রিকশা নেই। পরে তিনি সাংবাদিকদের 'এ ঘটনাটি এখানেই শেষ করে দিতে' বলেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, যার হাতে শহরের যানজট নিরসনের দায়িত্ব তিনি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শহরে অনিবন্ধিত যানবাহনের প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দিচ্ছে। যার ফলে তিনি আর্থিকভাবে সুবিধা ভোগ করছেন আর নগরবাসী অতিরিক্ত যানবাহনের বিরম্বনায় ভুগছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ট্রাফিক পুলিশের এসকল সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, পেশাদারিত্বের ভেতরে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow