যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন হামলা চালালে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া মনে করে, আমাদের ভূখণ্ডের গভীরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্তের অর্থ হলো- উত্তেজনা নতুন করে বাড়ানোর পায়তারা করা।
বিদায় বেলা রুশ ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত হানার জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বাইডেন প্রশাসন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন খবরে চটেছেন স্বয়ং নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
ডেমোক্র্যাটরাও এর তীব্র সমালোচনা করছেন। ট্রাম্প জুনিয়র এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স মনে হয় এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, আমার বাবা শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করবে। তিনি বাইডেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অকথ্য ভাষায় কিছু কথাও লিখেছেন।
এদিকে, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বাইডেন প্রশাসন আসলেই যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ও কিয়েভকে আসলেই এমন সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তা অবশ্যই নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির নীলনকশা ছাড়া কিছুই না। এমন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িত ছিল।
রুশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য আন্দ্রেই ক্লিশাস মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছেন, পশ্চিমারা এমন একটি মাত্রায় উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে যে, এটি এক রাতেই ইউক্রেনের সম্পূর্ণ ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
ফেডারেশন কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রথম ডেপুটি ভ্লাদিমির জাবারভ বলেছেন, মস্কো দ্রুতই বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি আরও বলেন, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার ক্ষেত্রে বড় একটি পদক্ষেপ।
এর আগে এ ধরনের পদক্ষেপের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোকে বারবার সতর্ক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি একাধিকবার বলেছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অর্থ হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের সরাসরি জড়িয়ে পড়া। এই ধরনের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
এর আগে দুজন মার্কিন কর্মকর্তাসহ তিনটি সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেন শিগগিরই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেমস ব্যবহার করতে যাচ্ছে, যার সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ৩০৬ কিলোমিটার। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেশ কিছুদিন ধরে এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন, বিশেষত রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য।
ফরাসি সংবাদপত্র লে ফিগারো জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও ইউক্রেনকে তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহারের অনুমতি দেবে। আল জাজিরার কূটনৈতিক সংবাদদাতা জেমস বেজ জানিয়েছেন, এই পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্য ইউক্রেনকে সহায়তা করা, বিশেষ করে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে।
বাইডেন দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন অস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দিতে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তবে সম্প্রতি যুদ্ধের পরিস্থিতি রাশিয়ার দিকে মোড় নেওয়ার পর তার অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা
এসএএইচ