মার্জিন ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার সময় বাড়লো

4 weeks ago 17

শেয়ারবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকারগুলোর গ্রাহকের (বিনিয়োগকারী) মার্জিন ঋণ হিসাবের আদায় না হওয়া লোকসানের (নেগেটিভ ইক্যুইটি) বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) জানানো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রভিশন রাখার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে বিএসইসি।

এতে বলা হয়েছে, যেসব স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংক মক্কেলের পোর্টফোলিও পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়ী ক্ষতির বিপরীতে রাখা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি, সেসব স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকদের তা সংরক্ষণের জন্য ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলো।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অনাদায়ী ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখার সুযোগ প্রথমে দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। সে সময় বিএসইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখন পুনর্মূল্যায়নজনিত ক্ষতির ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী শতভাগের পরিবর্তে ২০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে পারবে। তবে তা ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমান ৫টি ত্রৈমাসিক অংশে রাখতে হবে।

এ সুযোগ পরবর্তীতে আরও কয়েক ধাপে বাড়ানো হয়। সর্বপ্রথম এ সুযোগ বাড়ানো হয় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের জন্য। এরপর বাজার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় এর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

কিন্তু ২০১৫ সালে বাজার পরিস্থিতি আরও মন্দাভাব থাকায় মার্চেন্ট ব্যাংককারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতের প্রভিশন সংরক্ষণের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ায় বিএসইসি।

এরপর ২০১৭ সালে বাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। তবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। এ জন্য প্রভিশন সংরক্ষণের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি করা হয়।

এভাবে প্রভিশন সংরক্ষণের সময় যখন শেষের পর্যায় আসে, ঠিক তখনই মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। আর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তাদের দাবি মেনে নিয়ে সময় বাড়িয়ে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।

সম্প্রতি মার্চেন্ট ব্যাংকদের সংগঠন বিএমবিএ এর পক্ষ থেকে প্রভিশন সংরক্ষণের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বিএসইসিতে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে, বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা বিবেচনা করে গ্রাহকের শেয়ার বিক্রির চাপ বা ফোর্সড সেল বন্ধ রাখতে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন রাখার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।

বিএমবিএ'র সভাপতি এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্তৃকর্তা (সিইও) ও মহাব্যবস্থাপক মাজেদা খাতুন সই করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাব থেকে ব্যাপক পরিমাণ শেয়ার বিক্রির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পরে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার ব্যবসা করা অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে উল্টো বিনিয়োগকারীরা দেনাদার হয়ে যায়।

বিনিয়োগকারীদের হিসাবে আটকে থাকা টাকা ফেরত পেতে মার্চেন্ট ব্যাংক গুলোর হাতে দুটো রাস্তা আছে। এর মধ্যে একটি হলো- বিনিয়োগকারীদের হিসাব থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া। অন্যটি হলো- বিনিয়োগকারীদের হিসাবে যে লোকসান রয়েছে তার বিপরীতে প্রভিশন রেখে ধীরে ধীরে ঋণ কমিয়ে ফেলা।

শেয়ার বিক্রি করে দিলে পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ বাড়বে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে যাবে। তাই এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গ্রাহকদের মার্জিন হিসাবের অনাদায়ী ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখতে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিএমবিএ।

বিএমবিএর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত শেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএমবিএর ২৬ জন সদস্যের নেতিবাচক ইকুইটি সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে একজন সদস্য এরই মধ্যে তার নেগেটিভ ইক্যুইটির ব্যালেন্স সমন্বয় করেছে। আরও তিনজন সদস্য নেগেটিভ ইক্যুইটির ব্যালেন্স সমন্বয় করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তারা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নেগেটিভ ইক্যুইটির ব্যালেন্স সমন্বয় নিষ্পত্তি করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, পুঁজিবাজার এখনো ভালো অগ্রগতি হয়নি। পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী (মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ব্রোকার) যারা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কিনতে মার্জিন ঋণ দেয় তারা ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। সেইসঙ্গে পুঁজিবাজার দীর্ঘসময় নেতিবাচক অবস্থায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাবের লোকসান পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

আর বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক ইক্যুইটি হিসাব থেকে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের বিক্রির চাপ হচ্ছে। তাই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাব থেকে ব্যাপক পরিমাণ শেয়ার বিক্রির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

Read Entire Article