মালদ্বীপে প্রবাসী শ্রমিকদের ভিসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যবসা। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক শ্রমিক আটক হয়ে দেশে ফিরছেন। অথচ সরকার-অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা বাণিজ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র।
সরকারের দ্বিমুখী নীতি
মালদ্বীপ সরকার ঘোষণা দিয়েছে—বিদেশি কর্মী কেবল নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে পারবেন, অন্যত্র নয়। কিন্তু বাস্তবে ভিসা দেওয়ার নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছে এজেন্সিগুলোর হাতে। ফলে নীতির কড়াকড়ি ও বাস্তবতার মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈপরীত্য।
ভিসার বাজার ও ভোগান্তি
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ভিসার জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। চাকরির আশায় অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক সর্বস্ব বিক্রি করে এই টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু কাজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আটক হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ভিসার নামে আমাদের কাছ থেকে ৪–৫ হাজার ডলার নিয়েছে। কাজ পাইনি। পরে পুলিশ ধরল, এখন দেশে ফেরত যেতে হচ্ছে।
আটক ও ফেরতের সংখ্যা
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে—জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত আটক হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ২০০ শ্রমিক। এর মধ্যে অন্তত ২ হাজার ১০০ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুধু জুলাই মাসেই প্রতিদিন গড়ে ৫০–৬০ জন শ্রমিক আটক হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয় বরং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। সরকারের ভেতরের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিদেশি দালালরা এই চক্রকে সুবিধা দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, ‘ভিসা এখন শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ নয়; এটি রাজস্ব ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।’
অমীমাংসিত প্রশ্ন
একদিকে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক আটক হচ্ছে, অন্যদিকে ভিসা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তাহলে কি সরকার নিজেই এই ব্যবসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে—নাকি অসাধু চক্র প্রশাসনের দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে?
এমআরএম/জেআইএম