মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে হাজারো বাংলাদেশি কর্মীর অপেক্ষা

3 months ago 62

বাংলাদেশের জন্য আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কর্মীভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ সময় শুক্রবার (৩১ মে) রাত ১২টায়। এ কারণে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী অপেক্ষা করছেন।

শনিবার (১ জুন) থেকে আর কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারবে না। তবে পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে শ্রমবাজার আবারও খুলে দিতে পারে দেশটি। এখন পর্যন্ত যারা দেশটিতে পোঁছেছেন তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। এই মুহূর্তে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে শুক্রবারের (৩১ মে) পর বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন মো. সাব্বির আহমেদ (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ৩০ হাজার টাকার একমুখী (ওয়ানওয়ে) টিকিট এক লাখ আট হাজার টাকা দিয়ে কেটে এখানে এসেছি। অনেক বাংলাদেশি উল্টোপথে মানে দুবাই, কাতার, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া হয়ে কুয়ালালামপুরে ঢুকেছেন। ফলে এখানকার এয়ারপোর্টেও অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমি প্রায় সাত ঘণ্টা এয়ারপোর্ট অপেক্ষা করার পর নিয়োগকর্তাকে খুঁজে পাই। ঢাকার অভিজ্ঞতা একই রকম ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, অতিরিক্ত প্রায় ২০টি ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে কর্মীদের বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আনা হচ্ছে। যারা মালয়েশিয়ায় আসার কাগজপত্র পেয়েছেন, তাদের বড় অংশ পৌঁছেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি চিরদিনের জন্য বন্ধ হচ্ছে না। নানান কারণে তারা তাদের পলিসিগুলো পুনর্বিবেচনা করছে। আমাদের ধারণা, এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই তারা নতুন করে কর্মী নেবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেটি সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র নিয়েছেন। এদের বেশিরভাগ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন।

মালয়েশিয়া প্রবাসী আমীর হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ হলে সেটার বড় প্রভাব বাংলাদেশের শ্রম বাজারে পড়বে। বছরে অন্তত এক লাখ কর্মী অভিবাসন কমে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশীয় শ্রমবাজারেও দেখা যাবে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, শুধু ২০২৩ সালেই সাড়ে তিন লাখের বেশি শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে মালয়েশিয়া।

২০২৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মোট শ্রমিকের ১৫ শতাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আগতদের জন্য নির্ধারিত করে দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্যমতে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।

সম্প্রতি কর্মীদের মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া। গত ২৮ মার্চ জাতিসংঘের চার স্বাধীন বিশেষজ্ঞ মালেয়িশয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এক চিঠিতে তারা বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অপরাধী চক্রগুলো সক্রিয়। এই চক্রগুলো প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে ভুয়া কোম্পানিতে শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ঋণের চক্রে আটকে পড়েন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঘুসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন পর্যন্ত জড়িত। শ্রমিকদের ব্যাপক শোষণের অভিযোগের জবাব দেওয়র জন্য মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশকে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় চিঠিতে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস জেনেভায় মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি নাদজিরাহ ওসমানের একটি চিঠি আপলোড করেছে।
গত ২৮ মে লেখা ওই চিঠিতে তিনি সরকারের পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, মালয়েশিয়া অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে এবং অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের বিরোধিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিদেশি কর্মী নির্ধারণের বিষয়ে মালয়েশিায়ার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেন, সরকার একটি কসমেটিক সমাধান দিয়েছে যা মূল সমস্যার সমাধান করবে না। দুর্নীতি, ভেঙে যাওয়া নিয়োগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ এসব সমস্যার মূলে রয়েছে।

ইএ

Read Entire Article