মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশনের অভিযানে উদ্বেগ, ১০ দিনে আটক ১৪২৫ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান ডিসেম্বরের প্রথম দশ দিনেই নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ যে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করেছে, তাতে মোট ২৩৭৯ জন বিদেশি নাগরিক আটক হয়েছেন। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, এদের মধ্যে ১৪২৫ জনই বাংলাদেশি। এই বিপুল সংখ্যা শুধু প্রবাসী সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি, বরং মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নাজুক বাস্তবতাকেও সামনে নিয়ে এসেছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- বৈধ কাগজপত্র না থাকা, ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া বা ওভারস্টে, কর্ম পারমিটের শর্ত ভঙ্গ, অনুমোদনবিহীন স্থানে কাজ করা এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন। মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে, তবে ডিসেম্বরের অভিযানে বাংলাদেশিদের বিপুল সংখ্যায় ধরা পড়া প্রবাসী কমিউনিটিতে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় অংশই মালয়েশিয়ায় আসেন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে দেশটিতে এলেও অনেকে নির্ধারিত কাজ পান না। নিয়োগকর্তার কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া, পারমিট নবায়নে বিলম্ব, দালালের

মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশনের অভিযানে উদ্বেগ, ১০ দিনে আটক ১৪২৫ বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান ডিসেম্বরের প্রথম দশ দিনেই নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ যে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করেছে, তাতে মোট ২৩৭৯ জন বিদেশি নাগরিক আটক হয়েছেন। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, এদের মধ্যে ১৪২৫ জনই বাংলাদেশি।

এই বিপুল সংখ্যা শুধু প্রবাসী সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি, বরং মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নাজুক বাস্তবতাকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- বৈধ কাগজপত্র না থাকা, ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া বা ওভারস্টে, কর্ম পারমিটের শর্ত ভঙ্গ, অনুমোদনবিহীন স্থানে কাজ করা এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন। মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে, তবে ডিসেম্বরের অভিযানে বাংলাদেশিদের বিপুল সংখ্যায় ধরা পড়া প্রবাসী কমিউনিটিতে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের বড় অংশই মালয়েশিয়ায় আসেন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে দেশটিতে এলেও অনেকে নির্ধারিত কাজ পান না। নিয়োগকর্তার কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া, পারমিট নবায়নে বিলম্ব, দালালের প্রতারণা, কিংবা ভুল জব ম্যাচিং- এসব কারণে অনেক বৈধ কর্মীও অজান্তেই অবৈধ হয়ে পড়েন। ফলে অভিযান শুরু হলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন এই দুর্বল অবস্থায় থাকা শ্রমিকেরাই।

শ্রম ও অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই কাঠামোগত অসংগতি বিরাজমান। বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা, নিয়োগনীতি এবং মাঠপর্যায়ের তদারকির মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। ফলে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কর্মীরা প্রশাসনিক জটিলতায় পড়ে আটক হচ্ছেন।

বাংলাদেশি প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন যে, ইমিগ্রেশন অভিযান অনেক সময় পূর্বঘোষণা ছাড়াই বা প্রয়োজনীয় সময় না দিয়ে পরিচালিত হয়। কর্মস্থলের দূরত্ব, ডরমিটরির অবস্থান কিংবা পরিবহন সমস্যার কারণে অনেক শ্রমিক সবসময় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে পারেন না। এসব বাস্তবতা বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে, মালয়েশিয়া সরকার বলছে, নিরাপত্তা জোরদার ও শ্রমবাজার সুশৃঙ্খল রাখতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া তাদের হাতে বিকল্প নেই। ডিসেম্বরজুড়ে এ অভিযান চলবে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আটক ব্যক্তিদের ইমিগ্রেশন ডিপোতে রাখা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যও বড় ধরনের সতর্কবার্তা। মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য দেশ হলেও, নিয়োগে স্থগিতাদেশ, সিন্ডিকেট, অতিরিক্ত খরচ ও নানান দুর্নীতির অভিযোগের কারণে এই শ্রমবাজার আগেই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এখন বড় আকারে ধরপাকড় হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা আরও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

এএমএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow