মালয়েশিয়ায় শ্রমিক থেকে শিল্পপতি

মোস্তাকিম জনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গোকর্ণ গ্রামের অনাথ যুবক হাফেজ হুসাইন আহমাদ। স্বচ্ছল জীবনের আশায় বাবার রেখে যাওয়া শেষ জমিটুকু বিক্রি করে ২০০৮ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া পাড়ি দেন। মসজিদের ইমামতি দিয়ে শুরু, পরে কারখানায় শ্রমিক। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন তিনি দেশটিতে সফল শিল্প উদ্যোক্তা। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাফেজ হুসাইন বলেন, ‌‘মালয়েশিয়ায় প্রথম জীবন খুব কঠিন ছিল। বাবার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে আসার পর মনে হয়েছিল, ফিরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। কঠোর পরিশ্রম আর আল্লাহর রহমতই আমাকে ধরে রেখেছে।’ শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তামালয়েশিয়ায় প্রথমদিকে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অল্পদিনের মধ্যেই ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করলেও বারবার প্রতারণার শিকার হয়ে লোকসানে পড়তে হয়। তবু দমে যাননি। তার ভাষায়, ‘অনেকে দেশে ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু গ্রামের মানুষের আশা আমাকে আবার দাঁড়াতে শক্তি দিয়েছে।’ পরে মালয়েশিয়ান এক ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলেন ‘উই ওয়ান এগ্রো গ্রুপ অব কোম্পানি’। এগ্রো ফুড ভিলেজকুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কুয়ালা

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক থেকে শিল্পপতি

মোস্তাকিম জনি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গোকর্ণ গ্রামের অনাথ যুবক হাফেজ হুসাইন আহমাদ। স্বচ্ছল জীবনের আশায় বাবার রেখে যাওয়া শেষ জমিটুকু বিক্রি করে ২০০৮ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া পাড়ি দেন। মসজিদের ইমামতি দিয়ে শুরু, পরে কারখানায় শ্রমিক। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন তিনি দেশটিতে সফল শিল্প উদ্যোক্তা।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাফেজ হুসাইন বলেন, ‌‘মালয়েশিয়ায় প্রথম জীবন খুব কঠিন ছিল। বাবার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে আসার পর মনে হয়েছিল, ফিরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। কঠোর পরিশ্রম আর আল্লাহর রহমতই আমাকে ধরে রেখেছে।’

শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা
মালয়েশিয়ায় প্রথমদিকে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অল্পদিনের মধ্যেই ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করলেও বারবার প্রতারণার শিকার হয়ে লোকসানে পড়তে হয়। তবু দমে যাননি। তার ভাষায়, ‘অনেকে দেশে ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু গ্রামের মানুষের আশা আমাকে আবার দাঁড়াতে শক্তি দিয়েছে।’ পরে মালয়েশিয়ান এক ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলেন ‘উই ওয়ান এগ্রো গ্রুপ অব কোম্পানি’।

এগ্রো ফুড ভিলেজ
কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কুয়ালা সেলাঙ্গরের ৭০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘এগ্রো ফুড ভিলেজ’। এখানে আছে গরুর খামার, হাঁস-মুরগি উৎপাদন কেন্দ্র, মাছ চাষ, বাংলাদেশি শাক-সবজির চাষ এবং নির্মাণ সেবাসহ বিভিন্ন কৃষি-শিল্প কার্যক্রম।

প্রকল্পটিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। হাফেজ হুসাইন বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ একজন মালয়েশিয়ান অংশীদার জানান, যৌথ বিনিয়োগে দুই দেশই উপকৃত হচ্ছে। বাংলাদেশিরা পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত হওয়ায় ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন
‘এমএ পাস চাওয়ালা’র সাফল্যের গল্প বললেন সহিদুল 
ঝুঁকির চূড়ায় ঝুলে থাকা জীবন 

বাংলাদেশি খাবার
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। স্থানীয় খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেকেরই সমস্যা হয়। আগে এসব খাদ্য চাহিদার বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর ছিল। হুসাইন জানান, এখন স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশি নানা ধরনের সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদন করা হয়। এতে প্রবাসীদের জন্য খাবার পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে।

সামাজিক কাজ ও দান
ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি নিজ এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছেন তিনি। সম্প্রতি প্রায় আড়াই কোটি টাকার কয়েকটি বাড়ি ও স্থাপনা কওমি আলেম খোবাইব আহমাদ সিরাজীর কাছে হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন। হুসাইন বলেন, ‘দুনিয়ার পাশাপাশি আখিরাতের জন্যও কিছু রেখে যেতে চাই। এজন্য বড় একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি।’

ভিসা নীতি সহজ করার দাবি
মালয়েশিয়ায় উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে জটিল ভিসা নীতি বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, এখানে লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন, কিন্তু উদ্যোক্তার সংখ্যা খুব কম। ভিসা নীতি সহজ হলে অনেকেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এতে দুই দেশই উপকৃত হবে। কমিউনিটি নেতারা বলছেন, যৌথ শিল্পকারখানা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।

প্রবাসীদের প্রতি বার্তা
নিজের পথচলা প্রসঙ্গে হাফেজ হুসাইন বলেন, ‘আমি অনাথ হয়ে বড় হয়েছি। শ্রমিক থেকে শিল্পপতি হওয়ার পথটা সহজ ছিল না। আমার অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের সাহস দিক। হার না মানার শক্তি দিক।’

লেখক: মালয়েশিয়াভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কনটেন্ট নির্মাতা।

এসইউ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow