মাসুমের উপার্জনের টাকাতেই চলতো সংসার

3 months ago 19

পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন রাজমিস্ত্রি মাসুম বিল্লাহ (২৪)। তার উপার্জনের টাকাতেই চলতো সংসার। বাবা-মা, বোন ও স্ত্রী নিয়েই ছিল ছোট্ট সংসার। আয় অল্প হলেও এতেই খুশি ছিলেন পরিবারের সবাই। সবমিলিয়ে ছোট্ট সংসারটি চলছিল অনেকটাই হাসি-খুশিতেই। কিন্তু দুটি গুলিতে এ পরিবারের সবকিছু হয়ে গেছে এলোমেলো।

সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেন মাসুম বিল্লাহ। পথে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে সেখানকার লোকজন তাকে ভালুকা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ নিয়ে ওইদিন রাতেই গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

নিহত মাসুম বিল্লাহর বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের নলুয়াপাড়া গ্রামে। সেখানে বাবা-মা, দুই বোন ও স্ত্রী নিয়েই বসবাস ছিল তার। তবে মাসুম বিল্লাহ জীবিকার তাগিদে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন মাওনা নয়নপুরে। বাবা সাইদুর রহমান দরিদ্র কৃষক। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাসুম বিল্লাহ দ্বিতীয়।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিন নিহতের বাড়িতে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুতে পাগলের মতো প্রলাপ করে কাঁদছেন মা। তার পাশে বসা ছিলেন স্ত্রী। স্বামী হারিয়ে শোকে তিনিও যেন হয়ে গেছেন পাথর। বারবার আহাজারি করছিলেন বোনেরা। বাবা বারবার ছেলের কবরস্থানের কাছে যাচ্ছিলেন। এসময় উপস্থিত স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবার হওয়ায় মাদরাসায় ভর্তি হলেও পড়াশোনা করা হয়নি মাসুম বিল্লাহর। নিজেদের কৃষিজমি নেই। তাই বাবা অন্যের জমিতে ধানচাষ করতেন। তাই সংসারের হাল ধরতে অল্প বয়সেই কাজে লেগে যান মাসুম। তার উপার্জনের টাকায় সংসার চালানোসহ তিন বোনকে বিয়ে দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। দুই বছর আগে নিজেও বিয়ে করেছেন।

গত সপ্তাহের রোববার বাড়িতে এসেছিলেন মাসুম। তবে দিনে এসে দিনেই ফিরে যান কর্মক্ষেত্রে। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে মাওনা ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

ছেলে হারানোর কষ্টে কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না বাবা সাইদুর রহমান। শুধু বললেন, ‘আমার অবলম্বন আর কিছুই রইলো না’।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত মাসুম বিল্লাহর মা মুর্শিদা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেরে মাইরালছে। আমি কেমনে বাঁচবাম? আমাদের মাথার ওপর থেকে যেন বটগাছটাই সরে গেলো। এখন আর আমাদের দেখার মতো কেউ রইলো না।’

খালা সাবিনা আক্তার (মুর্শিদা আক্তারের ছোট বোন) জানান, ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে মাসুম বিল্লাহর ফোন থেকে একজনের কল আসে। তিনি জানায়ন, মাসুমের গুলি লেগেছে। ভালুকা সরকারি হাসপাতালে আছেন। তাড়াতাড়ি সেখানে যাওয়ার জন্য বলা হয়। পরে মরদেহ নিয়ে রাতেই ফিরে আসেন তারা।

এইচ এম কামাল/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article