গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর গ্রামে এক মর্মান্তিক দৃশ্য—২৫ বছরের লিটন বেপারি নামের এক যুবক টানা ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মায়ের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারানো লিটনের জীবন আজ মানবেতর।
২০১৫ সালে মা ফুলমালা বেগমের মৃত্যুর পর থেকেই বদলে যায় শান্ত-শিষ্ট এই তরুণ। প্রথমে সামান্য অস্বাভাবিক আচরণ, পরে পুরোপুরি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। কখনো নিজেকে আঘাত করার চেষ্টা, কখনো আবার হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের মানুষকে আক্রমণের ঝুঁকি—সব মিলিয়ে পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে বাড়ির পাশের একটি গাছে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয় স্বজনরা।
বছরের পর বছর ধরে সেই গাছের নিচেই তার আশ্রয়। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা শীত—সবই সহ্য করে বেঁচে আছেন লিটন। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সহানুভূতিশীল হয়ে খাবার দেন, তবে মূলত বড় বোন তানজিলা বেগমই তার একমাত্র ভরসা।
আবেগঘন কণ্ঠে তানজিলা বলেন, ‘ভাইটা ছোটবেলা থেকেই শান্ত-শিষ্ট ছিল, মায়ের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। মাকে হারানোর পর থেকে আর আগের মতো নেই। আমরা গরিব মানুষ, দিনে আনি দিনে খাই। চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। হয়ত সুচিকিৎসা পেলে সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।’
জানা গেছে, লিটনের বাবা ফয়জল বেপারি অনেক আগেই মারা গেছেন। ফলে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে বড় বোন তানজিলার ওপর। তার স্বামীর সামান্য আয় দিয়েই চলে পরিবার। এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার আহাম্মেদ বলেন, ‘পরিবার থেকে লিখিত আবেদন পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসন লিটনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। শিকলবন্দী অবস্থায় এভাবে একজন মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
এলাকাবাসীর মতে, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো একসঙ্গে এগিয়ে এলে লিটনের চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব। এতে শুধু একটি তরুণের জীবনই নয়, এক পুরো পরিবারও বাঁচতে পারে।