মিটার না দেখেই ‘মনগড়া’ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

2 months ago 6

ভ্যানচালক মো. আলম হোসেন তার ঘরে ব্যবহৃত বিদ্যুতের প্রতি মাসে বিল আসে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কিন্তু গত মার্চ মাসের পরে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ অফিসের কোনো রিডার বা বিল কাগজ আসেনি। চলতি জুন মাসের ২০ তারিখে ৮৩৭ টাকার একটি বিল কাগজ হাতে পান তিনি। বিল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৮ জুন। সময় শেষ হওয়ার দুদিন পরে বিল কাগজ পেলেও আলম ভাবেন গত কয়েক মাসের বিল হয়ত একসঙ্গে এসেছে। এটি ভেবে পুরো টাকা পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু এর ৭ দিন পর গত শনিবার (২৮ জুন) ফের ১৫০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসে আলমের কাছে। এতে হতভম্ব হয়ে আলম প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাইলে দেখতে পান এই সমস্যায় শুধু আলম নয় প্রতিবেশী বায়জীদ, জুনায়েত, মো. ফরিদ, মো. ফকর উদ্দিনসহ পুরো গ্রামে একই অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা জানায় অফিসে এলে ঠিক করে দেবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চর এলাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা।

স্থানীয়রা কুয়াকাটা জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে দুই-তিন মাসে রিডিং না নিয়ে মনগড়া বিল তৈরি, বিদ্যুতের মিটারের চেয়ে বেশি রিডিং উঠিয়ে অতিরিক্ত বিল আদায়, টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখের পরে বিল কাগজ পৌঁছানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন।

মিটার না দেখেই ‘মনগড়া’ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শুধু কাউয়ার চর গ্রামই নয় জোনালের আওতাধীন বেশিরভাগ গ্রাহকের এই অভিযোগ। গ্রাহকদের অভিযোগ, রিডাররা বেশিরভাগ সময় নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিল তৈরি করেন। বিশেষ করে জুন মাস এলে তারা বেশিরভাগ গ্রাহককে রিডিংয়ের চেয়ে বেশি বিল তৈরি করেন নিজেদের টার্গেট পূরণের জন্য। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন গ্রামের সহজ সরল মানুষ।

অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, দিনের পর দিন বিদ্যুৎ অফিসে হেঁটেও সমস্যার সমাধান মেলে না।

তবে এই জোনালের ডিজিএম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার আসল বিষয়টি জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মিটার না দেখেই ‘মনগড়া’ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন জানান, গত ৮ জুন আমার রিডিং উঠিয়ে নিয়েছে ৬৮১০ ইউনিট। ২০ দিন পর আমাকে বিল কাগজ দিয়েছে ২৮ জুন। বর্তমানে আমার মিটারে ব্যবহৃত ইউনিট ৬৭৭৭ ইউনিট। ২০ দিন ব্যবহার করার পরও আমার ৩৩ ইউনিট মিটারের চেয়ে বেশি বিল করা। আমার পূর্বের মাসে অনুপাতে যদি হিসাব করি তাহলে তারা ব্যবহারের চেয়ে ১৫০ ইউনিটের বেশি বিল করেছে। আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা কেন? এটা যে আমি একা তাই না এলাকার সবার এই অবস্থা। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

শুধু জামাল হোসেন নয় পার্শ্ববর্তী পশ্চিম কুয়াকাটার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন আনু তার ফেসবুকে বাড়ির মিটারের ছবি ও বিদ্যুৎ বিলের কাগজ যুক্ত করে লিখেছেন, গত ৮ জুন বিল প্রস্তুত করা হয়, বিল কাগজে ৪২৯০ ইউনিট দেখানো হয়েছে। অথচ আজ ২৭ জুন পর্যন্ত মিটারে ৪২৪৬ ইউনিট বিল উঠেছে। প্রশ্ন জুন এলে এমন ভৌতিক বিল কেন?

মিটার না দেখেই ‘মনগড়া’ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

চাপলী এলাকার ভুক্তভোগী মো. ফরিদ জানান, আমার ঘরে একটি লাইট ও মাঝে একটি ফ্যান চলে। আগে বিল আসত ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। এবার এসেছে ৯০০ টাকা। অথচ মিটার রিডিং অনুযায়ী এত ইউনিট খরচ হওয়ার কথা নয়। তারা নিজেরা তিনমাসে বিলের কাগজ দেয় না আবার বিদ্যুৎ অফিস থেকে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয়, বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে জরিমানা যুক্ত করেও বিল পরিশোধে বাধ্য হন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. সিফাতুল্লাহ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জোনালের এজিএম মোতাহার উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ধুলাসারের কাউয়ারচর এলাকা নিয়ে বেশি অভিযোগ থাকায় সেখানের দায়িত্বে থাকা মিটার রিডার কাম-ম্যাসেঞ্জার মো. মোস্তাফিজুর রহমান হিমেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।

মিটার না দেখেই ‘মনগড়া’ বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক সেবায় বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ জনবল সংকট। আমরা চেষ্টা করবো যাতে এ ধরনের ভুল আর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article