বাংলায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ ‘রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’ কার্যক্ষেত্রে বারবারই উচ্চারিত হয়। তবে প্রবাদের সত্যতা সর্বজনীন নয়। বাঁশির সুরে মানব মনের যে আকুতি ফুটে ওঠে তা বাস্তব অঙ্গনে কীভাবে পরিবর্তন আনে তারই উদাহরণ ওসমান গণি মিন্টু। তিনি ‘হাঁস মিন্টু’ নামে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন।
মিন্টুর বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পেছনে পেছনে মাঠেঘাটে চরে বেড়ায় হাঁসের দল। কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নোয়াকাটির উন্মুক্ত বিলে তাঁবু ফেলে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। আর এই হাঁসের খামার মিন্টুর ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
সাতক্ষীরার শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ওসমান গণি মিন্টু ‘হাঁস মিন্টু’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার বাবার নাম আরিফুল ইসলাম। তার পেছনে ছুটে বেড়ানো হাঁসের দলের এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে যাচ্ছে উৎসুক জনতাও। এমন দৃশ্য রীতিমতো অবাক করেছে স্থানীয়দেরও। শুধু বাজারের কৃত্রিম খাদ্যমুক্ত হাঁস পালনই নয়, বরং হাঁসের সঙ্গে অনন্য মিতালী গড়ে তুলে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন মিন্টু। এই হাঁস চাষ করেই স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, মিন্টু দুই বছর আগে গরুর খামারে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে হাঁস পালনের দিকে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ১৫০০টি হাঁস রয়েছে। ওসমান গনি মিন্টু মিয়া হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা মতো বাঁশির সুরে হাঁস পালন করে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বাঁশি বাজিয়ে হাঁসদের আহ্বান করেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন, যা স্থানীয়দের মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
ওসমান গনির মিন্টুর ইচ্ছা প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূসকে গণভবনে হাঁস উপহার দেওয়ার পাশাপাশি সুদমুক্ত ঋণের দাবি করেন। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার হাঁস পালনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে একজন প্রবাসী সহযোগিতা পাশাপাশি দেখতে আসবেন বলে জানান মিন্টু।
মিন্টু মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করছেন এবং এতে তার হাঁসগুলো সহজেই তার নির্দেশনা মেনে চলে। ইতিমধ্যে তিনি দুবার হাঁস বিক্রি করেছেন। হাঁস বিক্রির টাকা দিয়ে ৬টি গরু কিনেছেন তিনি।
নিজের জীবনের বিভিন্ন বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, হাঁস পালন করতে এসে অনেকের হাসি-ঠাট্টার পাত্র হয়েছেন তিনি। তেমন কি শ্বশুরবাড়ি থেকে বউকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে সেই শ্বশুরবাড়ি এলাকায় নোয়া কাঠির মাঠে হাঁস চরিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তার এই সফলতা দেখতে সকাল-সন্ধ্যা ভিড় জমায় স্থানীয়রা।
মিন্টু বলেন, ‘হাঁস পালন করে আমি সফল হয়েছি। আমি চাই বাংলাদেশের বেকার যুবকরা চাকরির পেছনে না ঘুরে হাঁস বা গাভি পালনের মতো বিভিন্ন কৃষি খাত নিয়ে কাজ করলে এগিয়ে যেতে পারবেন।’ এভাবে তিনি হাঁস পালন করে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন এবং এলাকায় ‘হাঁস মিন্টু’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
নোয়াকাটি গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও জামের আলী জানান, মন্টু মিয়ার হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো বাঁশির শব্দ শুনে হাঁস যখন পিছে পিছে যায় দেখতে খুবই ভালো লাগে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল এই দৃশ্য দেখার জন্য ২ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে। মন্টু মিয়াকে অনেক ধন্যবাদ জানান তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বাসিন্দা মিন্টু মিয়া। তার হাঁস পালন দেখে ও তার থেকে দীক্ষা নিয়ে হাঁস লালন-পালনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে পারেন। নিজেদের সমস্যা সমাধান করে তারা আত্মনির্ভরশীল হবেন আশা করি।