ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনে বিএনপি থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু মনোনয়ন পাওয়ায় সোনাগাজী উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ভুলে নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গত ২৯ নভেম্বর ও ১৯ ডিসেম্বর মিন্টু সোনাগাজীতে এলে তাকে ফুল দিয়ে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান নেতাকর্মীরা। সোনাগাজী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলে দলে উপস্থিত হয়ে তার আগমনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এ সময় দীর্ঘদিনের বিভক্তি ভুলে সবাই একজোট হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
নেতাকর্মীরা পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ছাপানোসহ নির্বাচনী প্রস্তুতিও জোরদার করছে। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়—সব স্তরের নেতাকর্মীদের চোখেমুখে এখন পরিবর্তন ও জয়ের স্বপ্ন।
গত কয়েক বছর ধরে সোনাগাজী বিএনপির মধ্যে সংগঠনগত কিছু মতানৈক্য থাকলেও মিন্টুর মনোনয়ন ঘোষণার পর নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। নেতাকর্মীদের আচরণে দেখা গেছে ঐক্যের ছবি। মিন্টু এলাকায় পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রা নিয়ে রাস্তায় নেমে তাকে অভ্যর্থনা জানান। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয় পুরো পরিবেশ। অনেকেই জানান, দলের দুঃসময়ে পাশে থাকার অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে মিন্টুকে তারা দীর্ঘদিন ধরে পছন্দ করেন। এবার তাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে দল আরও শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
সোনাগাজী বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মিন্টু ভাইয়ের মনোনয়ন আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমরা এখন সবাই একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি। নির্বাচনী মাঠে ঐক্যের বার্তা দিতে সবাই প্রস্তুত। দলের মধ্যে আগের মতো বিভক্তি নেই, সবাই এখন একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবুল মঞ্জুর সবুজ বলেন, আমরা এতদিন আলাদা আলাদা ছিলাম। কিন্তু মিন্টু ভাই সামনে আসতেই সবাই এক লাইনে চলে এসেছে। এ ঐক্য বজায় থাকলে নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হবো। পৌর যুবদলের সদস্য সচিব রাসেল হামিদি বলেন, মিন্টু ভাই একজন অভিজ্ঞ, পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। দলের দুঃসময়ে তিনি সবসময় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। তার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য—দলকে আরও সুসংগঠিত করা এবং জনগণের কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক মারুফ বলেন, মিন্টু ভাইয়ের মনোনয়ন এবং আগমন আমাদের সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। এখন আর কে কোন গ্রুপে ছিল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়—সবাই একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন দোলন বলেন, মিন্টু ভাই এলাকায় আসার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস দেখছি, তা অভাবনীয়। সবাই এখন এক হয়ে কাজ করছে। দলীয় ঐক্যই নির্বাচনী মাঠে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হবে। সোনাগাজী পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ইমাম উদ্দিন ভূঞা বলেন, মিন্টু ভাইয়ের মনোনয়ন সোনাগাজী বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দলে যে বিভাজন ও মতানৈক্য ছিল, তা আজ অনেকটাই দূর হয়েছে। মিন্টু ভাইয়ের আগমনে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সবাই এখন গ্রুপিং ভুলে এক কাতারে এসে কাজ করছে।
জেলা যুবদলের সদস্য ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দাউদুল ইসলাম মিনার বলেন, দলের সবাই এখন এক। আগে কে কোন দলে ছিল, সেটা এখন আর দেখার সময় নাই। আমরা সবাই মিলে মাঠে কাজ করছি। মিন্টু ভাইকে কাছে পাওয়া আমাদের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা। মিন্টু ভাই আসার পর সবাই হাসিমুখে, একসঙ্গে কাজ করছে। তার নেতৃত্বে আমরা ধানের শীষের জয়ের স্বপ্ন দেখছি।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূইয়া বলেন, সোনাগাজীতে মিন্টু ভাইয়ের আগমন আমাদের জন্য নতুন উদ্দীপনার উৎস। দীর্ঘদিন পর সোনাগাজী বিএনপিতে যে ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা তার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আস্থা এবং ভালোবাসার ফল। যুবদল সবসময়ই আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের সারির বাহিনী। সামনে যে নির্বাচন, তাতে যুবদল হবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালনকারী সংগঠন।
জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন খোকন বলেন, মিন্টু ভাই আমাদের কাছে এসে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তাতে সংগঠনের প্রতিটি নেতা-কর্মী নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে। আমাদের টার্গেট দলকে শক্তিশালী করা এবং মাঠে শক্ত উপস্থিতি দেখানো। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবদিন বাবলু বলেন, দীর্ঘদিনের ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছি। মিন্টু ভাইয়ের মনোনয়ন আমাদের জন্য আশার আলো। তাকে কাছে পেয়ে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত হয়েছে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সোনাগাজী-দাগনভূঞার সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা আমি সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব। এই এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ, সমস্যা ও সম্ভাবনার সঙ্গে আমি সবসময় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ কোনো শক্তিই আমাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা আন্দোলন ও নির্বাচনী সংগ্রামে এগিয়ে যাব।