চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট তারা। উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে কম সময়ে এবং কম খরচে দ্বিগুণ-তিনগুণ লাভ করছেন কৃষকেরা। তরমুজ চাষ করে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তা, মসজিদিয়া বুজননগর ও মাছুমেরতালুকে বেশ কয়েকজন কৃষক সাড়া ফেলেছেন।
অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় বছরের পর বছর বাড়ছে তরমুজ চাষ। এবার মিরসরাইয়ে স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় ৮ জন কৃষককে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদর্শনী প্লট দিয়েছে। এ ছাড়া নিজ উদ্যোগে চাষ করেছেন ২ জন। এবার উপজেলায় ৩০০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

মালচিং ও মাচাং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে কৃষকেরা সফলতা পাওয়ায় অন্যরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষ নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। আগামীতে আরও বড় পরিসরে তরমুজ চাষের স্বপ্ন বুনছেন অনেক কৃষক। বেশি লাভ হওয়ায় অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। দিচ্ছে মালচিং পেপার, সার ও বীজসহ প্রশিক্ষণ।
কৃষক রাজু চন্দ্র দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রথমবার ৩৩ শতক জমিতে ৬টি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। মালচিং পদ্ধতিতে এই চাষে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বাত্মক সহযোগিতায় সফলতা পাবো বলে আশাবাদী। এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’
আরও পড়ুন
আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন
পাবনায় মাল্টা চাষে বাজিমাত, বছরে আয় ১৫ লাখ

কৃষক মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দুই বছর যাবত তরমুজ চাষ করছি। প্রথমবার সফলতা পাওয়ায় এবারও ৩৩ শতক জমিতে ব্ল্যাকবেরি, বাংলালিংক, সূর্যডিমসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে মালচিং পেপার, সার, বীজসহ নানা সহযোগিতা পেয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি দেড় থেকে ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’
মিরসরাই উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (খৈয়াছড়াও মসজিদিয়া ব্লক) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খৈয়াছড়া-মসজিদিয়া ব্লকে অসময়ের তরমুজের ৮টি প্রদর্শনী স্থাপন করেছি। কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ, মালচিং পেপারসহ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পরামর্শ দিয়েছি। প্রায়ই ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ৩ বছর ধরে আমার আওতাধীন ব্লকে অসময়ের তরমুজ চাষ হচ্ছে। অল্প সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় তরমুজ চাষ দিন দিন বাড়ছে।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ৫০ শতক জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু হয়। মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে তা দাঁড়িয়েছে ৩০০ শতকে। উপজেলায় চাষ হওয়া তরমুজ জাতের মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাকবেরি, সূর্যডিম, বাংলালিংক, রসগোল্লা, লিয়োনা, কিংসুপার, বিগবাইট, জাফরান ও সুইটবাইট। উৎপাদিত তরমুজ ৩ কেজি থেকে শুরু করে ১০ কেজি হয়ে থাকে। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে বিক্রির উপযুক্ত হয় ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘কিছু তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। বাকি তরমুজ চলতি মাসের মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় আমাদের পক্ষ থেকে তরমুজ চাষিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। লাভজনক হওয়ায় ক্রমান্বয়ে অসময়ের তরমুজ চাষি বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।’
এসইউ/এএসএম

1 hour ago
4








English (US) ·