ফেনীতে অপহরণের পর এক শিশুর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চেয়েছিলেন অপহরণকারীরা। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে কোনো ফয়সালা হওয়ার আগেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশুটিকে। শিশুটির নাম আহনাফ নাশিত, বয়স ১০ বছর।
নিখোঁজের ৪ দিন পর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনীর দেওয়ানগঞ্জ এলাকার একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে ফেনী মডেল থানার পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে তিনজনকে। ঘাতকরা তার ভাইয়ের বন্ধু বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, আহনাফ নাশিতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী গ্রামার স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আহনাফ ফেনী একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন সোহাগের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আহনাফ নাশিত গত ৮ ডিসেম্বর ফেনী শহরের একাডেমি আতিকুল আলম সড়কে প্রাইভেট পড়তে যায়। পরে আর বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ফেনী মডেল থানায় ৯ ডিসেম্বর সাধারণ ডায়েরি করেন আহনাফের বাবা। তাকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালাতে থাকে পুলিশ। এরই মধ্যে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে মাঈন উদ্দিন সোহাগের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মুক্তিপণ বাবদ ১২ লাখ টাকা দাবি করেন অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ ও মুক্তিপণ বিষয়ে মামলা করেন নাশিতের বাবা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহভাজন আসামি আশরাফ হোসেন তুষারকে আতিকুল আলম সড়ক, মোবারক হোসেন ওয়াসিম ও ওমর ফারুক রিফাতকে বিসিক এলাকা থেকে আটক করা হয়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অপহরণকারীরা আহনাফ আল মাঈন নাশিতের পূর্বপরিচিত। গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টার থেকে ফেরার পথে তাকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঘুরতে বের হন তারা। পরে তাকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে আহনাফের বাবার কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। ঘুম ভাঙার পর নাশিত বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে। তখন আসামিরা রেললাইন সংলগ্ন ঝাউবনে নিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পূর্বপরিচিত হওয়ায় জানাজানি হওয়ার ভয়ে নাশিতকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন আসামিরা।
হত্যার ঘটনা আড়াল করতে আহনাফের স্কুলব্যাগ পাথর ভর্তি করে সেটি তার কাঁধে চাপিয়ে ঝাউবন সংলগ্ন কুচুরিপানাভর্তি ডোবায় লাশ ফেলে দেওয়া হয় ৯ ডিসেম্বর দিনেরবেলা। আসামিরা ডোবার পাশে গিয়ে লাশ যথাযথ স্থানে আছে কি না, তা যাচাইও করেন। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) লাশ অন্য জায়গায় সরানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা পারেননি আসামিরা।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতিই বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর দেওয়ানগঞ্জের ডোবা থেকে নাশিতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভিকটিমকে হত্যা করার পরও মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক করা হয় বাকিদের।