আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ঝিনাইদহের মহেশপুর শহরের জলিলপুর এলাকায় আধুনিক একটি পানি শোধনাগার প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৬ বছর আগে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগারও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পানি সরবরাহ সম্ভব হয়নি।
শোধনাগারটি চালু না থাকায় নষ্ট হচ্ছে সুইস, বাল্ব, মোটর, ফিল্টার, পাইপ, রিজার্ভ ট্যাংক, পাম্প গ্যালারি, পানির ট্যাংক, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
তালাবদ্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শোধনাগার ব্যবহারের অনুপযোগী আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে, করছে পোঁকামাকড়ে বসসবাস। পৌর এলাকার প্রায় ৬০ হাজার নাগরিক বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর পৌর এলাকার ৯৬ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকেরে চেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন এ পানি পান করলে মারাত্মক রোগব্যাধি হতে পারে। তা ছাড়া পৌরসভার সরবরাহ করা পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন থাকায় তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ও আয়রন দূরীকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মহেশপুর পৌরসভা একটি প্রকল্প নেয়।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে কাজ শেষ হয়।
পৌর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। তালাবদ্ধ অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে। নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। ভবনগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। এটি আর চালু করা সম্ভব হবে না। জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সাপ আর পোকামাকড়ের বসবাস গড়ে উঠেছে। টাকা লুট করার জন্য এসব প্রকল্প গ্রহণ করেন কিছু সরকারি লোক। আমাদের দাবি, শোধনাগারটি চালু করা হোক দ্রত সময়ে। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হোক। যারা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
শহরের জলিলপুর বাজারের মো. শাহ কামাল বলেন, এ শহরে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে। মানুষ নিজস্ব টিউবওয়েলের পানি পান করে। এ পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। পানি শোধনাগার নির্মাণের পর ৬ বছর ধরে পড়ে আছে। পৌরবাসীর কোনো উপকারে আসছে না।
মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, পানি শোধনাগারটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালু রাখা ব্যয়বহুল, যা এই নিন্ম আয়ের পৌরসভার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। চালু হলে গ্রাহকরা বিশুদ্ধ পানি পাবে। ব্যবহার না করলে যে কোনো জিনিস নষ্ট তো হবেই।