শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে মুচলেকা দিয়ে অটোরিকশা করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন আনন্দ মোহন কলেজের সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন। অধ্যক্ষকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পঞ্চম দিনের মতো শিক্ষার্থীদের এক অংশের আন্দোলন চলমান রয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজে আসার খবরে শিক্ষার্থীরা কক্ষে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে তাকে দুপুর ২টার দিকে উদ্ধার করলে তিনি মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মুচলেকায় ওই শিক্ষক লিখেছেন, ‘আনন্দ মোহন কলেজের চলমান সংকট উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনো দায়িত্ব পালন করব না।’
এর আগে, গত ৩ আগস্ট আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ৩ জুলাই উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাকির উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের মুখে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি কলেজে আসবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি আজ ক্যাম্পাস এলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সদ্য যোগদানকৃত অধ্যাপক মো. সাকির হোসেন তিনি আওয়ামী লীগের দোসর। তার ছোট ভাই রাকিব হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাগর হত্যা মামলার আসামিও তিনি। তাই অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য ঘোষণা করার দাবিতে গত রোববার জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস জানান, শহীদ সাগরের রক্ত এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা আমরা কীভাবে মেনে নেই বলেন। আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ কলেজে আসবে না বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু সাকির স্যার গোপনে গোপনে বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করছেন বলে আমরা জানতে পারছি। আজ তিনি কলেজেও এসেছিলেন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তাই আমরা তাকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করেছি। পরে তিনি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
ভূগোল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হারুনুজ্জামান সাগর বলেন, ফ্যাসিস্টের জায়গা আনন্দ মোহন কলেজে হবে না। আগেও বলেছি এখনো বলছি। সাকির স্যারকে আমরা চাই না। এর ব্যত্যয় হলে আরও কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এদিকে মুচলেকা দিয়ে কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাকির হোসেনকে কটাক্ষ করে ‘ভুয়া ভুয়া স্লোগান’ দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান খান সাদি বলেন, শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে স্যার মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সহকর্মী হিসেবে স্যারকে আমি অটোরিকশা করে বাসায় পৌঁছে দেই। কলেজে আসেন সাক্ষাতে বিস্তারিত বলব।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাকির হোসেন বলেন, তিন দশকের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকতা হিসেবে আমার বড় স্বপ্ন ছিল আমার আনন্দ মোহন কলেজকে একটা আনন্দময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবো। যেখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে সুমধুর। ছাত্রদের কোনো সমস্যা সমাধানে শিক্ষক এগিয়ে আসবে শ্রেণিকক্ষে শতভাগ ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকবে, শ্রেণিশিক্ষক আনন্দময় পরিবেশে পাঠদান করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমার স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, একটি বিষয়ে অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাকির হোসেন কলেজে গেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে। পরে তাকে নিরাপদে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে পুলিশ গিয়ে সহযোগিতা করে।